রাজশাহীর চারঘাটে দুই তরুণকে নিষ্ঠুর কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছেন স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা।
ওই নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর ওয়াদুদ শুভ ও তারসহযোগীরা স্থানীয় দুই তরুণকে তুলে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন চালান।
ওই দুই তরুণের একজনকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে নির্যাতন করা হয়। আরেকজনকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়া হয়। পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় বাঁচার আকুতির ভিডিও তারা মোবাইলে ধারণ করে রাখেন।
শুক্রবার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। যদিও মূল ভিডিওটি এক মাস আগের।
নির্যাতনের শিকার ওই দুই যুবক হলেন শলুয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ২২ বছর বয়সী মোহন আলী ও তার প্রতিবেশী ২০ বছর বয়সী মছু মিয়া।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ শুভর সহযোগীরা হলেন একই গ্রামের সাব্বির হোসন, মুক্তার হোসেন মুক্তা ও লালন আলী।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি পুকুরে হাঁটু পানিতে হাত-পা বেঁধে মোহনকে ফেলে রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে মাথা তুলে শ্বাস নিচ্ছেন মোহন। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে দেখছেন এবং আরেকজন স্বীকারোক্তি আদায় করার ভিডিও করছেন।
নির্যাতিত মোহনের মা শলুয়া ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ সদস্য নাসিমা বেগম জানান, ১ জুলাই প্রতিবেশী পারুলের বাড়ি থেকে গরু বিক্রির এক লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে মছুকে তুলে নিয়ে কানাজগাড়ি বিলের মধ্যে একটি পুকুর পাড়ে মাটিতে পুঁতে নির্যাতন করা হয়।
এ সময় সে মোহনের নাম বলে। পরে তারা মোহনকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করে টাকা চুরির স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয়। শুভ ও মুক্তা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তারা ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি।
নির্যাতনের শিকার মোহন বলেন, ‘আমি মালেকার মোড়ে কাঠ মিলে কাজ করছিলাম। শুভ, মুক্তা, মিজান গিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে আসে। তারা আমার হাত-পা, মুখ-চোখ বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রেখে নির্যাতন করেন। তাদের নির্যাতনে আমার শরীর এখনও অকেজো হয়ে আছে। এখন ভারি কাজ করতে পারি না।’
এ বিষয়ে পারুল বলেন, ‘আমার বাড়িতে গরু বিক্রির এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিল। আমার বাড়ি থেকে টাকা চুরি হয়েছে। তবে আমি কাউকে টাকা উদ্ধার করে দিতে বলিনি। মুক্তা ও শুভ কেন এসব করেছে আমি জানি না।’
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ শুভ বলেন, ‘একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নিতে আমার নাম ব্যবহার করছে। মোহন ও মাছুর নির্যাতনের সময় বা এই ঘটনার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই।’
চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মুক্তার, সাব্বির ও লালনের বিরুদ্ধে মাদকের ৬ থেকে ৭টি মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারও করেছিলাম। এখন জামিনে রয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ‘যে ভিডিওটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেই ঘটনাটা গত মাসের। আমরা ওই সময় খবর পেয়েছিলাম। তাদের থানায় অভিযোগ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা ওই সময় কোনো অভিযোগ না দেয়ায় পুলিশ সামনে এগোয়নি।’