কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে থেকে এবার মিলেছে মোট ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। ঐতিহাসিক এই মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এতো টাকা পাওয়াটা নতুন রেকর্ড।
শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ উপস্থিত ছিলেন।
টাকা গণনা শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দানবাক্সগুলো থেকে প্রথমে টাকা বের করে বস্তায় ভরা হয়। আটটি দানবাক্সে এবার ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। পরে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। গণনার কাজে প্রায় ২০০ জনের ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। গণনা শেষে পাওয়া গেছে মোট ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা।
এর আগে ৬ মে রমজানের কারণে চার মাস পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ১৯টি বস্তায় তখন রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।
এছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপা। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩ মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।
টাকা গণনা কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ.টি.এম ফরহাদ চৌধুরী, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শেখ জাবের আহমেদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাশিতা-তুল ইসলাম, তানিয়া আক্তার, নাবিলা ফেরদৌস, মাহমুদা বেগম সাথী, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নেন।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। তাদের একজন এনামুল হক হৃদয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা হৃদয় বলেন, ‘মানুষের মুখে আর টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। এর আগে গতবার দেখতে এসেছিলাম। এবারও নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি।’
গণনায় অংশ নেয়া হেফজখানা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবদুর রহিম ও মো. সাজিদ হোসাইন বলেন, ‘দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন। আমরা সবসময় অপেক্ষায় থাকি কবে মসজিদের দানবাক্স খোলা হবে। একসঙ্গে এত টাকা দেখতে এবং গুনতে আমাদেরও খুব ভাল লাগে।’
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন। তিনি এই মসজিদে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন ২৮ বছর ধরে।
তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম নয়; হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী অনেকেও এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’
মকবুল হোসেন জানান, অতীতে এই মসজিদে কেবল আশপাশের এলাকার মানুষ দান করতেন। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে টাকা-পয়সা দান করেন। এছাড়া বিদেশিরা অনেক সময় আসেন, পুরো মসজিদ ঘুরে দেখে যাওয়ার সময় দানবাক্সে বৈদেশিক মুদ্রা দান করেন তারা।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পর নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। তাই এখানে দান করেন তারা।
জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। বর্তমানে সেটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩ একর ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।