কক্সবাজারের টেকনাফে দুর্গম পাহাড়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানা গড়ে তুলেছিল স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। সেখান থেকে তৈরি অস্ত্র নিজেদের ডাকাতির কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহ করা হতো।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার টেকনাফের রঙ্গিখালী পাহাড়ে অভিযান চালিয়েে এই অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে ডাকাত ফয়সাল বাহিনীর প্রধান ফয়সাল ও তার পাঁচ সহযোগীকে আটক করেছে র্যাব।
এ সময় অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে দুটি একনলা বড় বন্দুক, চারটি এলজি, একটি অর্ধনির্মিত এলজি, শর্টগানের ৭ রাউন্ড গুলি, রাইফেলের ১০ রাউন্ড গুলি, একটি ড্রিল মেশিন, একটি আগুন জ্বালানোর মেশিন, দুটি লেদ মেশিন, দুটি বাটাল, একটি ধার দেয়ার রেত, দুটি লোহার পাইপ, দুটি প্লাস, একটি কুপি বাতি এবং তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের অভিযানে আটক ডাকাত সর্দার ফয়সাল ও তার সহযোগীরা। ছবি: নিউজবাংলা
আটক ৬ জন হলেন- হ্নীলা রঙ্গিখালী এলাকার ফয়সাল, টেকনাফ পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার বদি আলম, দক্ষিণ আলীখালী এলাকার কবির আহাম্মদ , পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার সৈয়দ হোসেন, পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার দেলোয়ার হোসেন ও উলুছামারি কুনারপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান।
শনিবার দুপুরে কক্সবাজার র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক।
তিনি জানান, টেকনাফের হ্নীলা অঞ্চলের গহীন পাহাড়ে একাধিক ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। ডাকাত চক্র প্রতিনিয়ত এলাকাবাসী এবং পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানিসহ খুন, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল।
পাশাপাশি তারা অস্ত্র তৈরি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে টাকার বিনিময়ে তা সরবরাহ করে আসছিল । এসব তথ্য পাওয়া পর থেকেই এসব ডাকাত দলের গতিবিধি এবং অবস্থান নজরদারিতে রাখে র্যাব এবং এসব ডাকাত দলকে ধরার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে।
অভিযানের বর্ণনা দিতে গিয়ে মেজর সাদিকুল জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি দল টেকনাফের হ্নীলা রঙ্গিখালী এলাকার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্র ধরতে অভিযান পরিচালনা করে।এ সময় অস্ত্র তৈরির একটি কারখানা আবিষ্কার করে র্যাবের দলটি।
র্যাবের অভিযান টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা র্যাবের ওপর গুলি বর্ষণ করে এবং পালানোর জন্য দৌড় দেয়। এ সময় ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর হোতা ফয়সালকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল তার ডাকাত চক্রের অন্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে পরবর্তীতে আরও পাঁচজনকে আটক করে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উল্লেখ করে র্যাব জানায়, চক্রটি টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সালের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র কারবার এবং হত্যাসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরিকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ও তার সহযোগীরা আরও জানায়, দুর্গম পাহাড়ি আস্তানায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানাও গড়ে তোলে তারা। সেখানে তারা অস্ত্র তৈরি করে তা নিজেদের কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ পাহাড়ের অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করত।
আটক ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ৩টি, বদি আলম ওরফে বদাইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, কবির আহাম্মদের বিরুদ্ধে ২টি, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে আরও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সাদিকুল হক।