একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে কমেন্টের জেরে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের ছয় নেতা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজাদ হোসেন মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মাসুম শেখ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সাময়িক বহিষ্কৃত ছয়জন হলেন কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ইমন সরদার, উপ-সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক সোহাগ শরিফ ও নিজামকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ মোল্লা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শুক্রবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কাশিয়ানী উপজেলা শাখার এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে, সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকায় উক্ত ছয়জনকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গোপালগঞ্জ জেলা শাখা বরাবর সুপারিশ করা হলো।’
কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজাদ হোসেন মৃধা বলেন, ‘জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই সব ছাত্রলীগ নেতারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। ফলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছয় ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্রলীগ মুজিব ও শেখ হাসিনার আদর্শে আদর্শিত। সেখানে আদর্শ বিচ্যুত কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে আমরা যে রাজনীতি করি, সে জায়গায় সাংঘর্ষিক হয়েছে।’
কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক সোহাগ শরিফ ১৪ আগস্ট সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে তাকে নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন।
কমেন্টে তিনি লেখেন, ‘আমি কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক। আমি একজন মুসলিম হিসাবে হুজুরের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। এ কারণে যদি আমাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়, তবে করুক। আমি গর্বিত, আমি মুসলিম।’
পরে শরিফসহ ছয় ছাত্রলীগ নেতা সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের ওই ছয় নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কার নিয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন সোহাগ শরিফ।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘এই কমেন্ট করার জন্য আমাকে কাশিয়ানী থানা ছাত্রলীগের আমার উক্ত পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একজন মুসলিম হয়ে আরেক মুসলিম মারা গেলে তার মৃত্যুর খবর শুনে ইন্নালিল্লাহ পড়া ও তার জন্য দোয়া করা কি অপরাধ?
‘ছাত্রলীগের বহিষ্কারের কোন শর্তে লেখা আছে যে, মৃত ব্যক্তির পরকালের জন্য দোয়া করলে সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা হবে ও তাকে বহিষ্কার করা হবে? মৃত ব্যক্তি নিয়ে রাজনীতি করা কতটা যৌক্তিক? একটা কথা মনে রাখবেন, ধর্মের থেকে রাজনীতি বড় নয়।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আজ আমি আপনি রাজনীতির কারণে ছাত্রলীগে আছি, কাল যুবলীগ, এরপর আওয়ামী লীগ। এভাবে দলের পরিবর্তন হবে, কিন্তু ধর্ম তো একটাই আমার। সেটা হলো ইসলাম।’