বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর সেই প্রকৌশলীকে বদলি

  • প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার   
  • ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:৪৪

প্রকৌশলী শামীমের হবিগঞ্জে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে পিডিবির সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির বলেন, ‘অনিয়ম দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না। প্রকৌশলী শামীমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

লাগাতার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের পর অবশেষে বদলি হলেন মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে কর্মরত পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম। প্রকৌশলী শামীমের দূর্নীতি নিয়ে নিউজবাংলায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া এ প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অন্য গণমাধ্যমেও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে তার বদলির বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ।

অবশেষে বৃহস্পতিবার এক আদেশের মাধ্যমে তাকে হবিগঞ্জে বদলি করা হয়েছে। বিউবি সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির ও বিতরণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আরাফাত-আল-মাজিদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক দপ্তরাদেশে তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

পিডিবির দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তার বদলির খবরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছেন জুড়ী উপজেলার সাধারণ গ্রাহকরা। তার বদলির খবরে তাৎক্ষণিক ভুক্তভোগী অনেক সাধারণ গ্রাহককে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে। এসময় তারা এ কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চেয়ে চাকরি থেকে অপসারণ দাবি করেন।

সম্প্রতি এ প্রকৌশলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পিডিবি অফিসসহ পুরো উপজেলায় তার বদলির দাবি ওঠে। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী অনেক সাধারণ গ্রাহক ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগে পিডিবি অফিসে লিখিত অভিযোগও করেন। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমের দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা পিডিবির এ দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাস বলেন, ‘পিডিবির এ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন জুড়ীতে থাকার সুবাদে দুর্নীতির সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তাকে অবিলম্বে এ উপজেলা থেকে অপসারণের করে তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিচার দাবি করছি।

উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত অনিয়ম-দুর্নীতির পরও এ কর্মকর্তা জুড়ীতে ৯ বছর ধরে বহাল আছেন। কয়েকদিন আগেই অনিয়ম করে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির (বিদ্যুতের) লাইন কেটে দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। মুক্তিযোদ্ধারাও তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।’

পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলাম রুয়েল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের আব্দুল বারী নামের দরিদ্র এক কৃষককে ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে বৈধ মিটার না দিয়ে অন্য নামের আরেকজনের মিটার সংযোগ দেন পিডিবির এ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে কয়েকমাস পর এ সংযোগ অবৈধ আখ্যা দিয়ে ৮৭ হাজার টাকার মামলা দিয়ে ওই কৃষককে জেল খাটান তিনি।’

সভায় ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম সেলু এ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে অবিলম্বে তার অপসারণসহ বিচার দাবি করেন।

উপসহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম। ছবি: সংগৃহীত

পিডিবির জুড়ী অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান রবিউল আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করছি। বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২২টি ফাইলে স্বাক্ষর করতে প্রকৌশলী শামীম আমার কাছ থেকে মোট ৪৪ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এ প্রকৌশলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় পর বদলির গুঞ্জন উঠলে আমি ঘুষের ৪৪ হাজার টাকা ফেরত চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাকে বিদ্যুৎ অফিসের সকল স্টাফদের সামনে দরজা বন্ধ করে মারধর করেন। আমি আমার টাকা ফেরতসহ এ অন্যায়ের বিচার চাই।’

স্থানীয় ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমারা তার বদলিতে খুশি হলেও তার দুর্নীতি ও অপকর্মের বিচার চাই।’

পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কল্যাণে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ প্রকৌশলী শামীমের মতো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য সরকারের বদনাম হচ্ছে। শামীম কর্মকর্তা নন, তিনি একজন ডাকাত। আমরা তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার চাই।’

জানা যায়, ২০১৪ সালের মে মাসে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে যোগদান করে ৯ বছর ধরে একই অফিসে কর্মরত প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম।

নানা দূর্নীতির অভিযোগে ২০২০ সালে কর্তৃপক্ষ তাকে বদলি করলেও তদবির করে অদৃশ্য হাতের ইশারায় ৩ মাসের মাথায় তিনি আবারও ফিরে আসেন জুড়ীতে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন এক উপজেলায় কর্মরত থাকার সুবাদে তিনি নিজ অফিসে গড়ে তুলেছিলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নানা অজুহাতে সাধারণ গ্রাহকদের মিটার কেটে এনে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করতেন প্রকৌশলী শামীম। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে গ্রাহকদের মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে ভুরিভুরি। তার মামলার অত্যাচারে অনেকে ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়েছেন। নিজ অফিসকে তার ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করেছিলেন এ কর্মকর্তা। তার অত্যাচারে পিডিবিতে অস্থায়ী চাকরি করা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিভিন্ন অবৈধ করাতলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা নিতেন উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম। শামীমের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বারবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনকই নড়ছিল না।

এছাড়া অনেক গ্রাহকরা বৈধ মিটার পেতে আবেদন করলে তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিডিবি অফিসে জমাকৃত পুরাতন মিটার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হত। পরে আবার এসব মিটার অবৈধ আখ্যা দিয়ে মামলার মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানি করতেন তিনি।

বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশার গ্যারেজের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা পেতেন পিডিবির এই অসাধু কর্মকর্তা। নিজ বলয়ের কর্মচারীদের মাধ্যমে শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে অনিয়ম-দুর্নীতি করতেন হরহামেশা। তার বিরুদ্ধে নিজ অফিসে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। অফিসে কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে ও তার কথামত না চললে বদলিসহ চাকুরিচ্যুতির হুমকি দিতেন তিনি। তার অত্যাচারে ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অভিযোগের পর সদ্য বদলি হওয়া জুড়ীর উপসহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীমের সঙ্গে বদলির বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

জুড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবাসিক প্রকৌশলী কবির আহমদ বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রকৌশলী শামীমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন গ্রাহক অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রকৌশলী শামীমের হবিগঞ্জে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে পিডিবির সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির বলেন, ‘অনিয়ম দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না। প্রকৌশলী শামীমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর