মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছোট-বড় ৭৩টি খাসিপুঞ্জি আছে। এসব পুঞ্জিতে বাস করা খাসিয়াদের জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। বর্ষাকাল হচ্ছে খাসিয়া পান উৎপাদনের ভরা মৌসুম।
সাধারণত একটি পানগাছ থেকে অন্য সময়ে যে পরিমাণ পান তোলা হয়, বর্ষা মৌসুমে সে গাছ থেকেই তুলনামূলক দেড় থেকে দুই গুণ বেশি পান পাওয়া যায়, কিন্তু অনাবৃষ্টিতে এ বছর চিরাচরিত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না পানের বরজে।
চাষিরা জানান, চলতি বছর খরার প্রভাবে পান উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে যে পান তোলা হচ্ছে, সেগুলো আকারে অন্য মৌসুমের চেয়ে অনেক ছোট। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
খাসিয়া সোশ্যাল কাউন্সিল ও পুঞ্জি সূত্রে জানা যায়, ভরা মৌসুমের বাইরে একটি পানজুম বা পানের বরজ থেকে প্রতিদিন তিন কুড়ি পান তোলা যায়। জুন থেকে আগস্টের ভরা মৌসুমে পাঁচ কুড়ি পান তোলা যায়। ২০ কান্তায় এক কুড়ি। এক কান্তায় ১৪৪টি পান থাকে।
এবার ভরা মৌসুমে পানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিকে এবার এক কুড়ি পানের (২ হাজার ৮৮০টি পান) দাম অন্য বছরের মতোই ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, কিন্তু এবার উৎপাদন কম হওয়ায় আগের বছরের মতো লাভ হচ্ছে না চাষিদের।খাসিয়া পানচাষিরা জানান, পাহাড়ি টিলায় পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা নেই। পান চাষ পুরোটাই প্রকৃতিনির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টির ওপর চাষিদের নির্ভর করতে হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বৃষ্টি না হলে পান উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ে।
এ বছর দীর্ঘ খরার কারণে সময়মতো পানগাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। পানগাছ পরিচর্যার সময় হচ্ছে জুন থেকে আগস্ট মাস। এবার অনেক দেরিতে বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে।
চাষিরা জানান, চক্রাকারে একটি পানগাছ থেকে এক থেকে দেড় মাস পরপর একবার পান তোলা হয়। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। একটি পানগাছ থেকে পান তুলতে দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত বিরতি দিতে হচ্ছে।
তারা আরও জানান, শুধু পান উৎপাদনই কমেনি, পানপাতার আকারও ছোট হচ্ছে। পানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে না। বাজারে বড় পানের চাহিদা বেশি। বড় পান হলে যে দাম পাওয়া যেত, ছোট পানে সেই দাম পাওয়া যায় না।
কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পানচাষি শামিম পামথেত বলেন, ‘খরার কারণে সঠিক সময়ে গাছে পান আসেনি। এখন পানের ভরা মৌসুম। এখনও বৃষ্টি খুবই কম হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পুরোপুরি পান তোলা যায় না, পরিচর্যা করা যায় না।’আরেক পানচাষি জেসি পতমী বলেন, “পানগাছ থেকে নতুন চারা কাটাকে বলা হয় ‘বুট টাং’। এবার খুব কমই চারা কাটা হচ্ছে। এখন গাছ পরিচর্যার মৌসুম। এ মৌসুমে একটি পানজুমে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
তিনি বলেন, ‘গত বছর ভরা মৌসুমে খাসিয়া পানের বৃহৎ বাজার সিলেট ও সুনামগঞ্জে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়েছিল। বন্যার কারণে পানের চাহিদা কমে যায়। পানের প্রকৃত দাম পাননি চাষিরা।
‘এবার খরায় পান উৎপাদন কমেছে, যার কারণে ধারাবাহিক আর্থিক লোকসানে আছেন পানচাষিরা।’
সরকার থেকে খাসিয়া পানচাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এ চাষি।খাসিয়া সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুছিয়াং বলেন, ‘পান চাষ খুব সতর্কভাবে ও যত্ন নিয়ে করতে হয়। অনাবৃষ্টিতে পান পরিচর্যায় দেরি হয়ে গেছে।
‘এতে পানের উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। পান উৎপাদন কম হওয়ায় কম-বেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’