শেরপুর সদর উপজেলার ৭ নম্বর চর ইউনিয়ন এলাকায় দশানী নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বাড়িঘর ও গাছপালা।
ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার ৭ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার ও মসজিদ। এমন অবস্থায় আতঙ্ক ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের লোকজন।
ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী দশানীর ভাঙনে এ এলাকায় গত বছরও কয়েক দফায় বিলীন হয় বসতভিটা, কবরস্থানসহ আবাদি জমি। অনেকের জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় মাথা গোঁজার নেই ঠাঁই। পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে না পেরে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে।
স্থানীয়রা জানায়, দশানীর ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অন্তত অর্ধশত একর আবাদি জমি, আট থেকে ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চিরতরে হারিয়ে গেছে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক।
গত ২০ বছরে ৭ নম্বর ও ৬ নম্বর চর এলাকায় নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত একর আবাদি জমি ও বাড়িঘর, কিন্তু ভাঙন রোধে নেয়া হয়নি টেকসই ব্যবস্থা।
এবার দশানীর ভাঙনের মুখে পড়েছে ৭ নম্বর চর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মসজিদ। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে নদীগর্ভে চলে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। এতে করে এলাকার শিশুদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ৯০। আমার বাড়ি এ নিয়া চারবার নদী নিয়া গেছে। এহন বয়সও শেষ আর জমিও নাই যে, আরেক জায়গায় ঘর তুলমু।’
মুন্ডল মিয়া বলেন, ‘এর আগের বছরও নদীতে সব নিয়া গেছে আমার। পরে নতুন করে খুব কষ্টে আরেক জায়গায় বাড়িঘর তুলছিলাম।
‘এবারও সব নিয়া গেছে। আমি একটু শহরে গেছিলাম। আইসা দেহি আমার ভিটার অর্ধেক নিয়া গেছে।’
কিতাব আলী বলেন, ‘আমাদের এডাই (একটা) স্কুল আছে। ওইডাও ভাঙনের পথে। এই স্কুল নিয়া গেলেগা আমাগো পুলাপানগুলা পড়ব কই?’
স্কুলের সভাপতি শফিউল আলম বলেন, ‘এটা একটা গরিব এলাকা। এখানে একটাই স্কুল।
‘এ স্কুলটা নদী যদি নিয়ে যায়, তাহলে শিক্ষাগ্রহণের আর উপায় থাকবে না। ব্যবস্থা না নিলে নতুন করে জমি দিয়েও স্কুল দেয়ার মতো ব্যবস্থা নাই।’
স্কুলছাত্র নাহিদ বলে, ‘স্কুলডা নদী নিয়া গেলেগা কই পড়মু আমরা? এমনেই তো আমাগর এলাকায় আর স্কুল নাই। এডা হাই স্কুল আছে। তাও পাঁচ কিলোমিটার দূরে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুদান দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৭ নম্বর চরের বাজার স্কুল ও মসজিদ ভাঙনের মুখে আছে। সেখান থেকে ১০০ ফিট দূরে আছে মাত্র।
‘এ ভাঙন যদি রোধ করা না যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে আমাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিলে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।’
পাউবো শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমি অফিসের কাজে ঢাকায় আছি। দশানী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
‘আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভাঙন প্রতিরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে উপজেলার মানচিত্র থেকে এ ইউনিয়ন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।