বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে চলছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল

  • প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ   
  • ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৪১

হাসপাতালটিতে ৩২ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন। হাসপাতালে ৩৭ জন কর্মচারীর পদের বিপরীতে ২০ জন। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বিকল হয়ে এক মাস ধরে এক্স-রে করা বন্ধ রয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

সুনামগঞ্জে অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে চলছে জেলা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালে ৬৬ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩১ জন। বাকি অর্ধেকেরও বেশি, অর্থাৎ ৩৫ ডাক্তারের পদ খালি।

মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স ও শিশু বিভাগেই কেবল ছয় পদে ৬ জন ডাক্তারই আছেন। তবে সার্জারি, গাইনি ও নাক-কান-গলা বিভাগে দুই জন করে ডাক্তারের পদ থাকলেও হাসপাতালে আছেন একজন করে ডাক্তার। এছাড়া চর্মরোগ, ডেন্টাল সার্জন ও ফিজিশিয়ান বিভাগেও ডাক্তার রয়েছেন একজন করে।

সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য মেডিক্যাল অফিসার পদে। এ হাসপাতালে ৩২ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা, অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন। এ ছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ সামলানোর জন্য ৩৭ জন কর্মচারীর পদ থাকলেও আছেন ২০ জন। রোগ নির্ণয় করার জন্য স্থাপিত ল্যাবে ৪ জনের স্থানে কাজ করছেন ৩ জন। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বিকল হয়ে এক মাস ধরে এক্স-রে করা বন্ধ রয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন জেলার সচেতন নাগরিকদের প্লাটফর্ম ‘জনউদ্যোগ’।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ে আয়োজত এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে হাসপাতালের বর্তমান চিত্র। জেলা শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়নে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

হাসপাতালের আইসিইউ নিয়ে বক্তারা বলেন, সরকারের বরাদ্দ ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে নির্মিত হয়েছে আইসিউ ইউনিট। দশ শয্যাবিশিষ্ট এ আইসিইউ ইউনিটের সকল নির্মাণ ও মেশিনারিজ স্থাপন কার্যক্রম শেষ করেছে জেলা গণপূর্ত অফিস। এটি উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। শুধু ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এই নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এ ছাড়াও বর্হিবিভাগ সেবায় ডাক্তারদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগও রয়েছে বলে জানান বক্তারা। এ বিভাগে সেবা নিতে সাধারণ রোগীরা সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করলেও অনেক সময় ডাক্তার আসতে দুপুর ১টা বাজে বলে জানান তারা।

জনউদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, শিক্ষাবিদ যোগেশ্বর দাশ, কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পাঞ্চালি চৌধুরী, দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবিতা বীর, এসইজি সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম মজনু, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবীলি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সৃজন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কানিজ সুলতানা প্রমুখ।

এসময় স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারে। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দালালদের আইনের আওতায় আনতে পারব। তাছাড়া হাসপাতালের ডাক্তাররা আন্তরিক হলে সেবা প্রত্যাশীরা ভালো সেবা পাবেন।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের মোট জনবলের অর্ধেকেরও কম রয়েছে। এটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখন প্রায় ৪১৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তবুও এই কম জনবল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

এক্স-রে মেশিন বিকলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেড়মাস ধরে এক্স-রে মেশিনের ব্যাটারি নষ্ট। এটির ব্যাটারি নাকি দেশে পাওয়া যায় না। তাই এক্স-রে সেবা প্রদান নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। আমরা আরেকটি মেশিন আনার চেষ্টা করছি।’

অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘আমাদের একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এটির অবস্থাও ভালো নয়। হাসপাতাল এলাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। আমি দু’বার ডেকে হাসপাতাল এলাকায় ৫টি ভালো অ্যাম্বুলেন্স রাখতে বলেছি। তারা এটি মানছেন না। সব অ্যাম্বুলেন্স তারা হাসপাতাল চত্ত্বরে রাখেন। এটি নিয়ে সবাইকে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মানোনয়নে অন্তত তিন মাসে একবার সবাইকে নিয়ে বসা যায়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো উঠে আসলে আমার পক্ষে কাজ করা সহজ হবে।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানব চৌধুরী, সাংবাদিক মোশফিকুর রহমান স্বপন, সোহানুর রহমান সোহান, কামরান আহমেদ, মহিমা মিলি প্রমুখ।

এ বিভাগের আরো খবর