জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে নিজেদেরকে ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ায় শপথ ভঙ্গ হয়েছে অভিযোগ করে আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। উপস্থিত ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপিপন্থী অন্য আইনজীবীরা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের আপামর জনগণের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত শপথের মাধ্যমে দেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের অঙ্গীকার করে থাকেন। একইসঙ্গে ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করার অঙ্গীকার করে থাকেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘১৫ আগস্টের আলোচনা সভায় কয়েকজন বিচারকের বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ বিচারক হিসেবে নেয়া শপথের সুস্পষ্ট লংঘন কিনা তা প্রশ্ন রাখার দাবি রাখে। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী তার দলীয় সভায় যে ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন, অনেক বিচারকের বক্তব্যে তেমনই একজন রাজনীতিবিদের বক্তব্যের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।’
আপিল বিভাগের বিচারক এম. ইনায়েতুর রহীমের বক্তব্য কোড করে আইনজীবী কায়সাল কামাল বলেন, ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিচারকদের চিহ্নিত করেছেন। তিনি স্পষ্টতই দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে শাসক দলের নেতাদের মতো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। বিচারক বলেছেন, ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে…। শুধু ভোট দেয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়।
‘অন্যদিকে মাননীয় বিচারক আবু জাফর সিদ্দিকী নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে মৌলিক অধিকার জনগণের রয়েছে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন- সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয়, কেউ তাকিয়েও দেখে না; নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?’
তিনি বলেন, ‘বিচারকদের এহেন বক্তব্য কতটুকু বিচারকসুলভ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিচায়ক তা সহজেই অনুমেয়। তারা বিচারকের মহত্ব ধারণ করতে পারেন কি না তা নিয়ে জনমনে অনেক সংশয় ও প্রশ্ন রাখছে। বস্তুতপক্ষে একজন রাজনীতিকের বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।’
‘এদেশের জনগণের ভোটাধিকার ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো তথাকথিত নির্বাচন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করার যে স্বপ্ন এই অনির্বাচিত সরকার দেখছে, গত ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিচারকের বক্তব্যের মাধ্যমে তা উস্কে দেয়া হয়েছে’ বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই আইনজীবী।
বিচারকদের এরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে শপথ ভঙ্গ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আইনগত ও নৈতিকভাবে তারা (বিচারকদ্বয়) বিচার কাজ পরিচালনার অধিকার হারিয়েছেন। আমরা এসব স্বঘোষিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারককে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
আগামী সোমবার সারাদেশে সব বারে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের কর্মসূচি উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে
এদিকে বিচারকদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের এমন কর্মসূচি উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কর্মসূচি দিয়েছে। উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য এটি করছেন তারা।’