একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামানকে হুমকির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি ওই চিকিৎসকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন জামায়ত-শিবিরের ফেসবুক গ্রুপ থেকে।
হুমকিদাতা তাফসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য তাফসিরুল। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ডাক্তারের নম্বর ছড়ানো হয়েছে। সেখান থেকে তার নম্বর সংগ্রহ করেন তাফসিরুল। তা ছাড়া তিনি নিজেও আইটি বিশেষজ্ঞ। গ্রুপ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ডাক্তারকে হুমকি দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী চিকিৎসকের এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও ৬-এর একটি দল বুধবার রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাফসিরুলকে গ্রেপ্তার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্যই তাফসিরুল ওই চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেন। চিকিৎসায় সাঈদীর পরিবারও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারপরও যারা এই চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট জামায়াত নেতা সাঈদী অসুস্থ হওয়ায় তাকে বিএসএমএমইউর জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট রাতে তিনি মারা যান। সাইদী চিকিৎসারত অবস্থায় বিশেষজ্ঞ টিম আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা করে। সাঈদীর পরিবারও তার চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া সাঈদীকে চিকিৎসা দেয়া এস এম মোস্তফা জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পাশাপাশি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তাফসিরুল জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারসহ চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে ফেসবুকে ও মোবাইলে মেসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।’
তাফসিরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাফসিরুল স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে। সে স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য। সে আইটিতে দক্ষ হওয়ায় অনলাইনে ইমেইল মার্কেটিংয়ের কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতো।
‘এছাড়া তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফি এলাকার জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে তার পিতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং এসব মামলায় সে কারাভোগ করেন।’
তিনি জানান, গ্রেপ্তার তাফসিরুল ফেসবুকে ছাত্র শিবিরের নামে দুইটি গ্রুপের অ্যাডমিন। তার মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মুছে ফেলা। কিন্তু তার মোবাইলে হত্যার হুমকি সম্বলিত মেসেজের স্ক্রিনশট পাওয়া যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্যই তিনি ডাক্তারকে হুমকি দেন। সাঈদীর পরিবারও চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যারা এই চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি স্বার্থান্বেষী দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ডাক্তারের নম্বর ছড়ানো হয়েছে। এই সব গ্রুপ থেকে অনেকেই নম্বর সংগ্রহ করে ডাক্তারকে হুমকি দিচ্ছেন। তাদেরকেও গ্রেপ্তারে কাজ করছে র্যাব। এ ছাড়া গ্রুপগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’