বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৬৩ জেলায় বোমা হামলা: দেড় যুগেও শেষ হয়নি বিচার

  •    
  • ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০৯:১৯

মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে।’

জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার দেড় যুগেও শেষ হয়নি এ ঘটনায় হওয়া মামলার বিচার।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা করা হয়।

এসব মামলায় ৬৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত শেষে ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ৪৩টি মামলা বিচারাধীন। ৩২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত।

গ্রেপ্তারকৃত আসামির মধ্যে ৩৫৮ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয় ১৫ জনকে।

ঢাকার মামলাগুলোর কী অবস্থা

ঢাকা মহানগর আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় ১৮টি মামলা হয়। এই ১৮টি মামলায় পুলিশ ও র‌্যাব ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেননি। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এ কারণে ১৪টি মামলায় ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। বাকি ৪টি মামলা বিচারাধীন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় যেসব মামলা ছিল, তার মধ্যে বর্তমানে তিনটি মামলা বিচারাধীন। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।’

মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে।

‘চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না। তারপরও সাক্ষী যা হয়েছে বা আরও কয়েকটা সাক্ষী নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা আছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ দেশে ২০০৪ সালে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়। তারপর ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতার জানান দেয়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযান ও তদন্তের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সীমিত করে দেয়া হয়েছে।

‘নতুন নতুন নামে যারাই আত্মপ্রকাশ করুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সবশেষ ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে আরেক জঙ্গি সংগঠনের হোতাসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সংগঠনটিও নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

সিরিজ বোমা হামলার মামলার বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সাক্ষীর অনুপস্থিতি, বিচারকের ঘনঘন বদলির কারণে মামলার কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তা ছাড়া একেকটি মামলা একেক কারণে বিলম্বিত হয়ে থাকে।

‘সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর সেসবের ধীরগতির কারণ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেয়া যাবে। কোনো মামলা না দেখে ধীরগতির কারণ ব্যাখ্যা করা যাবে না।’

সিরিজ বোমা হামলার দেড় যুগ পর কতটা সক্রিয় জঙ্গিরা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ২০০০ সালে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবির কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোণায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে আলোচনার বিষয় ছিল জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম।

জেএমবির কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, জেএমবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান জানান দেয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবির পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করে ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুইটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য, চলতি বছরে বান্দরবানের পাহাড়ে জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ বছর এটি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে আরেকটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

বিভিন্ন বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে জানান, দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক যায়নি।

গত বছরের শেষের দিকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পর গত ৯ আগস্ট সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে গত ১৩ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পাহাড়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে আরেকটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান নেতাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের প্রচার ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা হামলার কৌশল রপ্ত করছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‌্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, আসাদুল ইসলাম আরিফসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হন। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে।

‘জাতিগতভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। এ কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি কার্যক্রম থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাই বলে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না, তবে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে খোঁজখবর ও নজরদারি করছি। এটা নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর