মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালাপাহাড়ে দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। নতুন করে সেই আস্তানা থেকে বিপুল সংখ্যক গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। এই আস্তানে থেকে পালিয়ে আসা ইমাম মাহমুদের কাফেলার ১৭ সদস্যকে স্থানীয় মানুষ আটক করে। এরপর বেরিয়ে আসে দুর্গম পাহাড়ে নতুন আস্তানার সন্ধান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে অপারেশন হিলসাইড-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারের স্থানীয়রা সন্দেহজনক ১৭ ব্যক্তিকে আটক করেন। এই খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে যায় আমাদের টিম। এ অভিযান থেকে আটককৃতরা গত শনিবার যে আস্তানায় অভিযান চালানো হয়, সেখান থেকে আটককৃতদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই। এরপর কর্মধা ইউনিয়নের কার্যালয় থেকে আমরা তাদের আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাই। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই কালাপাহাড়ে তাদের আরও একটি আস্তানা আছে বলে আমরা জানতে পারি।’
‘আমরা ভোরে ওই আস্তানার সন্ধানে বের হই। দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখানে গিয়ে বিশেষায়িত ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি ঘর থেকে ছয় কেজি এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরক) ও ১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। সেখান থেকে আটকৃতরা সবাই স্বীকার করে যে তারা নতুন উগ্র সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। যেদিন তাদের আটক করা হয়, তখন তাদের সঙ্গে ছিল নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা ও ৯৫টি ডেটোনেটর।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, এখানে ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ডাক্তার আছেন, ইঞ্জিনিয়ারও আছেন। যেহেতু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে অনেক সময় ও কৌশলের প্রয়োজন হয়, তাই এ মুহুর্তে তাদের মূল পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
আটককৃতরা হলেন- নাটোরের গাঁওপাড়ার ২৮ বছর বয়সী জুয়েল মাহমুদ, সিরাজগঞ্জের পুরাবাড়ির ৩০ বছর বয়সী সোহেল তানভীর রানা, কক্সবাজারের রামুর ২১ বছর বয়সী সাদমান আরেফিন ফাহিম, ১৯ বছর বয়সী মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব, যশোরের মোল্লাপাড়ার ১৭ বছর বয়সী ফাহিম খান, পাবনার আতাইকোলার ১৯ বছর বয়সী মো. মামুন ইসলাম, গাইবান্ধার চাদপাড়ার ২৪ বছর বয়সী রাহাত মন্ডল, জামালপুরের ২১ বছর বয়সী সোলাইমান মিয়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ৩৪ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম, বগুড়ার হাটশিপুরের ২৯ বছর বয়সী মো. আশিকুল ইসলাম, পাবনার আতাইকুলার ২৬ বছর বয়সী মামুন ইসলাম, ঝিনাইদহের ছয়াইলের ২৪ বছর বয়সী তানভীর রানা, সাতক্ষীরার তালার ২৫ বছর বয়সী জুয়েল শেখ, পাবনার আতাইকুলার ৩৮ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম, পাবনার সাথিয়ার ২০ বছর বয়সী মো. আবির হোসেন, মাদারীপুরের ২৩ বছর বয়সী মেহেদী হাসান মুন্না ও টাঙ্গাইলের ২৫ বছর বয়সী কোয়েল।
গত শনিবার ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি অভিযান চালায়। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণসামগ্রী, কমব্যাট বুট এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়।
অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার ২২ বছর বয়সী রাফিউল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ২৫ বছর বয়সী হাফিজ উল্লাহ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ২২ বছর বয়সী খায়রুল ইসলাম, তার স্ত্রী ১৭ বছরের মেঘনা, সাতক্ষীরার ৪০ বছর বয়সী শরিফুল ইসলাম, পাবনার আটঘরিয়া থানার আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী ২২ বছর বয়সী শাপলা বেগম, সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমের স্ত্রী ২০ বয়সী মায়েশা ইসলাম, বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সুমন মিয়ার স্ত্রী ১৮ বছর বয়সী সানজিদা খাতুন, সাতক্ষীরার তালা থানার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী আমিনা বেগম এবং তার মেয়ে ২০ বছর বয়সী হাবিবা। এ ছাড়া অভিযানে তিন শিশুকেও হেফাজতে নেয় সিটিটিসি।