ফরিদপুরের সদরপুরে এক গৃহবধূকে হত্যার পর মরদেহ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর তুরাগ কামারপাড়া এলাকা থেকে সোমবার রাতে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি হাবুল বেপারী গ্রেপ্তার হন।
প্রাণ হারানো রাবেয়া বেগম বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
র্যাব জানায়, স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে স্বামী হাবুল তার দুলাভাই সূর্য্য মোল্লাকে নিয়ে রাবেয়াকে হত্যা করেন। স্ত্রীর প্রতি আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল সূর্য্য মোল্লার।
রাজধানীর কারাওন বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার দুপুরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় রোববার নিজ বসতঘরের পেছনে সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে রাবেয়ার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ফরিদপুরের সদরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাত বছর আগে রাবেয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে হাবুলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রাবেয়ার বাপের বাড়িতে ঘর নির্মাণ করে স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন হাবুল।
‘গত কয়েক মাস ধরে স্ত্রী রাবেয়ার বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ শুরু হয় হাবুলের। আসবাবপত্রের দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করার ফলে তার উপার্জনও কম ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হাবুলের উপার্জন কম থাকায় প্রায়ই তিনি স্ত্রীর থেকে নিজের বিভিন্ন খরচের জন্য টাকা চাইতেন। যেহেতু রাবেয়া তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় চালাতেন, এ জন্য তিনি স্বামীকে টাকা দিতে চাইতেন না। যার কারণে রাবেয়ার প্রতি সন্দেহ আরও বেড়ে যায় হাবুলের।
‘হাবুলের দুলাভাই সুর্য্য মোল্লা বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম রাবেয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছেন। ধার পরিশোধের জন্য রাবেয়া বারবার চাপ প্রয়োগ করলে সূর্য্য মোল্লার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সূর্য্য মোল্লা মনে করেন, রাবেয়াকে মেরে ফেললে ধার করা টাকা ফেরত দিতে হবে না। এ চিন্তা থেকে তিনি হাবুলের কথা অনুযায়ী হত্যা পরিকল্পনায় সম্মতি ও সহযোগিতা করতে রাজি হন।’
র্যাবের মুখপাত্র জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার রাতে হাবুলের দুলাভাই রাবেয়ার বাড়িতে যান। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সুযোগ বুঝে রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন হাবুল। আর সূর্য্য মোল্লা পেছন থেকে রাবেয়ার হাত চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
মরদেহ গুম করার উদ্দেশে ঘরের পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দিয়ে হাবুল ও তার দুলাভাই আত্মগোপনে চলে যান বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।