বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ১১:০৮

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে ৭৫-পরবর্তী সময়ে দলে ভাঙন দেখা দিয়েছিলো। তার আগে ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী দল ত্যাগ করেছিলেন। ৬৬তে ছয় দফা ঘোষণার পর অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। প্রতিটি সংকট সামলে উঠেছে আওয়ামী লীগ।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাতারাতি পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তার ঘনিষ্ঠ অনেক সহচরই যোগ দেন খুনি পক্ষের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগেও দেখা দেয় ভাঙন। তা অব্যাহত থাকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরও। তবে দৃঢ় নেতৃত্বে আবার দলকে ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি।

জাতির পিতাকে হত্যার পর চার জাতীয় নেতাকে শত চেষ্টা করেও খুনিরা পক্ষে টানতে পারেনি। মাথানত করেননি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও এইচ এম কামরুজ্জামান। তাজউদ্দীন আহমেদ ও এম মনসুর আলী মোশতাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

পক্ষান্তরে, ভীরু কিছু নেতা খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে চরম বিশ্বাসঘাতকতা এবং কাপুরুষতার পরিচয় দেন। এমনকি সে সময় স্পিকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি মালেক উকিল লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নিন্দা বা প্রতিবাদ জানাননি। বরং নেতিবাচক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং ১৯৭৬ সালে যিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সেই মহিউদ্দিন আহমেদ খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন। কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুর রউফ, রাখি আক্তার ডলি প্রমুখ মোশতাকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস নিয়ে রচিত বইয়ের প্রণেতা দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে ৭৫-পরবর্তী সময়ে দলে ভাঙন দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু তার আগেও ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী দল ত্যাগ করেছিলেন। ৬৬-তে ছয় দফা ঘোষণার পর অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে গিয়েছিলেন।

‘প্রতিটি সংকট সামলে উঠেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা এবং এদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে আওয়ামী লীগ এদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ১৯৭৬ সালের ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্যদের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে দলীয় কার্যক্রম ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত প্রস্তুত কমিটি একযোগে কাজ চালিয়ে যাবে। আর ৩১ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে দলের ম্যানিফেস্টো অনুসারে গঠনতন্ত্র অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া হবে।

১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন লাভ করে। পরে ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐকমত্যের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্ভব না হওয়ায় একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তাকে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ১০ দিনের মধ্যে ৪৪ সদস্যের একটি সাংগঠনিক কমিটির নাম ঘোষণার দায়িত্ব দেয়া হয়। কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয় যে ৪৪ জন ছাড়াও কারারুদ্ধ নেতারা মুক্তিলাভের পর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

১৯৭৮ সালের ৩ থেকে ৫ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আব্দুল মালেক উকিলকে সভাপতি এবং আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু মিজানুর রহমান চৌধুরী এই কমিটিকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দেন এবং ১৯৭৮ সালের ১ আগস্ট আলাদা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। ফলে আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগে মোজাফফর হোসেন পল্টুর নেতৃত্বে আরেকটি ভগ্নাংশ বেরিয়ে যায় এবং সেটিও আওয়ামী লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৮১ সালের ১৩ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় হোটেল ইডেনে। এই কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করা হয়। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন।

১৯৮২ সালে ঘটে আরেক নাটকীয় ঘটনা। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাকশাল পুনরুজ্জীবনের নামে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলে সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দলত্যাগীদের বহিষ্কার করা হয়।

১৯৮৭ সালের ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও সাজেদা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ গঠিত হয়।

কার্যত এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের ঐক্য সূদৃঢ় হয়। স্বৈরশাসক এরশাদ এবং জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে অবশেষে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। মাঝখানে বিরতি পড়লেও ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর টানা ক্ষমতাসীন দলটি।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। আর এ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন দলটি।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করছে। দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজের একটি অংশ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও কিছু দেশ নির্বাচন প্রশ্নে মাথা ঘামাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী যে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এই সংকটও জয় করবে জাতির পিতার হাতে গড়া এই রাজনৈতিক দল।

এ বিভাগের আরো খবর