বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ক্ষতি কিছুই না, মিডিয়া তিলকে তাল করেছে’

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৫৪

দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা এক থেকে দেড় কোটি টাকার। শুধু একটু পাথর সরে গেছে। মিডিয়া তিলকে এমন তাল করছে যে মনে হচ্ছে আমার লাইন ভেঙে চলে গেছে। কিছু পাথর গেছে। পাথরটা ওখানে বসানো হবে, শেষ।’

চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সাতকানিয়ার কেরানিহাটের একটু আগেই কেবিএম ইটভাটা। এই ইটভাটার কাছাকাছি এলাকায় মহাসড়ক ক্রস করেছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন।

মহাসড়ক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের রেললাইন ধরে দুই কিলোমিটারের মতো এগুলেই তেমুহনী এলাকা৷ এই এলাকায় প্রায় আধ কিলোমিটার রেললাইনের পাথর সরে গেছে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায়। রেললাইনের নিচের পাথর ও মাটি সরে গিয়ে চার থেকে পাঁচটি স্থানে তৈরি হয়েছে বিশালাকার গর্ত। এতে বিভিন্ন স্থানে মাটি দেবে গিয়ে বেঁকে গেছে রেললাইন।

সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা বড় এই প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ বেশ বড় অংকের বলে ধারণা করা হলেও প্রকল্প পরিচালকের দাবি এই ক্ষতি নিতান্তই সামান্য। বরং গণমাধ্যম এই অল্প ক্ষতিকে ভয়াবহ হিসেবে তুলে ধরে তিলকে তাল বানিয়েছে।

দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা এক থেকে দেড় কোটি টাকার। শুধু একটু পাথর সরে গেছে। মিডিয়া তিলকে এমন তাল করছে যে মনে হচ্ছে আমার লাইন ভেঙে চলে গেছে। কিছু পাথর গেছে। পাথরটা ওখানে বসানো হবে, শেষ।’

বন্যায় যে ক্ষতিটুকু হয়েছে সেটার দায়ভারও রেলওয়ের নয় বলে জানান এই প্রকল্প পরিচালক। বলেন, ‘ক্ষতির ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই বহন করবে। কারণ আমরা এখনও প্রকল্প বুঝে নেইনি। এটা তো এখনও ঠিকাদারের অধীনে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।’

এমনকি চালু রেললাইনেও এভাবে পাথর সরে যায় বলে দাবি করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের চালু লাইনে এরকম ক্ষতি হয়। আমাদের যে লাইনগুলো চালু আছে ঢাকা-চট্টগ্রামে, তারপর ঢাকা-সিলেট, ওই লাইনেও এগুলো হয়। চালু লাইনেও হয়।’

এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার উদাহরণ টেনে সেখানেও বন্যায় রেললাইনের পাথর সরে গিয়ে আস্ত রেল কাত হয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

পাথর সরে যাওয়াটা নিতান্তই মামুলি ক্ষতি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা কিছুই না, এটা আমরা খুব সহজে ঠিক করতে পারব।’

১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। তৈরি হয়েছে প্রায় ৯০ কিলোমিটার রেললাইন। সে হিসাবে বাকি আছে ১১ কিলোমিটারের কিছু বেশি।

তবে এই রেললাইনকেই এই অঞ্চলে (দক্ষিণ চট্টগ্রাম) সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার জন্য দুষছেন স্থানীয়রা। রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ব দিকে বাস করেন ৪৫ বছর বয়সী মো. সেলিম। সোমবার দুপুরে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুধবার (৯ আগস্ট) রাতে এখানে বেশি পানি হয়েছে। পূর্বদিক থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসছে। আমরা দোতলায় ছিলাম। ওখান থেকে পানির স্রোত দেখেছি। রেললাইনের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানির উচ্চতায় ৪ থেকে ৫ ফুট ব্যবধান ছিল। পূর্ব দিকে পানি বেশি ছিলো। সেদিক থেকে ঢলের পানি এসেছে।’

সেলিমের ধারণা, নির্মীয়মাণ রেললাইনে পর্যাপ্তসংখ্যক কালভার্ট না থাকায় পানি আটকে যায়। ফলে রেললাইনের দুপাশে পানির উচ্চতা বেড়ে চাপ তৈরি হয়।

তিনি জানান, ১৯৯৯ সালেও এরকম ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তবে সে সময় পানি আটকে ছিল না, তাই বেশি ক্ষতি হয়নি। এবার রেললাইনের কারণেই অতিরিক্ত পানি হয়েছে বলে দাবি তার।

রেললাইন বন্যার একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হকের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেন জলাধারে সড়ক নির্মাণের সময় ফ্লাইওভারের মতো করে নির্মাণ করা হয়। এতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। বাস্তবেই যত বেশি কালভার্ট থাকবে পানিপ্রবাহ ততোই স্বাভাবিক থাকবে। তাতে সড়ক বা অন্য কোনো স্থাপনাও ঠিক থাকবে।’

লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন চৌধুরী বাবুলেরও ধারণা বন্যা হয়েছে রেললাইনের কারণেই। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রেললাইনের কারণে পানি দ্রুত সরে যেতে পারছে না- এটার কিছুটা সত্যতা আছে। রেললাইনে পর্যাপ্তসংখ্যক কালভার্ট দেয়ার দরকার ছিল।

‘এতো বছর কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। এ বছর রেললাইনের কারণে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বোঝা যাবে কোন কোন এলাকায় আরও কালভার্ট দিতে হবে। এটা জেনে নিয়ে সংশোধন করা দরকার।’

তবে রেললাইনই বন্যার একমাত্র কারণ মানতে নারাজ সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম. এ মোতালেব। তার মতে, গেল তিন দশকে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হলেও এর সবচেয়ে বড় কারণ অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ওই অঞ্চলের নদীগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি পানিপ্রবাহ। তবে রেললাইনকে দায়ী করার বিষয়টিও খুব বেশি অযৌক্তিক নয় বলে মত তার।

তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণ হিসেবে রেললাইনকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দায়ী করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ অতিবৃষ্টি। আমি পুরো জীবনেও এমন বৃষ্টি দেখিনি। পার্শ্ববর্তী হাঙর নদী, ডলু নদী ও শঙ্খতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীর ভেঙে পানি লোকালয়ে চলে এসেছে। তাই এই বন্যাটা হয়েছে।’

তবে রেললাইনের কারণে বন্যার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রেললাইনের দুপাশে কিন্তু পানি সমান। দুপাশে পানি সমান থাকা মানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট রয়েছে। রেললাইনের কারণে এক পাশে পানি আটকাতে পারে, উভয় পাশের পানি তো আর আটকাবে না৷ মূলত পানিপ্রবাহের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। তাই পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে দ্রুত সময়ে সরে যেতে পারছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি থাকবে না।’

তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত পেলে আরও কিছু কালভার্ট তৈরি করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এই বন্যা আবার হবে কিনা সেটা তো শিউর না। এরকম বন্যা তো গত একশ’ বছরে হয়নি।

‘ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন বন্যা প্রায়ই হবে- বিশেষজ্ঞরা যদি এমন মতামত দেন এবং আরও কিছু কালভার্টের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা তা অবশ্যই করব। আমরা তো এটাকে ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারি না। তবে বিশেষজ্ঞরা যদি বলেন যে এমন বন্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আরও বেশিসংখ্যক কালভার্ট করা হবে না।’

মফিজুর রহমান জানান, বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয়, বরং অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দিকে নজর সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, ‘১০০ কিলোমিটার রেললাইন করতে হবে, সেটা নিয়ে আমি চিন্তায় আছি। বন্যার এই ক্ষতি নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।

বন্যার এই ক্ষতি ঠিক করতে দুই সপ্তাহ লাগবে। এটা সামান্য কাজ, আধ কিলোমিটারের। এটা ঠিকাদার করে ফেলবে। ১০০ কিলোমিটার পুরোটা রেডি করব কীভাবে এখন সেটাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।’

২০২৪ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হতে যাওয়া এই রেললাইনে আগামী সেপ্টেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান মফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এখনও ১০-১২ কিলোমিটার বাকি আছে৷ ওটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামে। বন্যায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানিসহ কৃষি ও অন্যান্য খাতে শত কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।

এ বিভাগের আরো খবর