আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় সরকারব্যবস্থা গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
রাষ্ট্রপতির কাছে ডাকযোগে সোমবার আবেদনপত্রটি পাঠান আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।
তিনি জানান, সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এ আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, প্রতিবার নির্বাচনকালে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, সংঘর্ষ, রাস্তাঘাট অবরোধের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ চরমভাবে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে দেশের তরুণ সমাজ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কর্মকাণ্ডে হতাশ। এ জন্য দেশের মেধাবী তরুণ সমাজ প্রতিনিয়ত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
আইনজীবী আবেদনে বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যেখানে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এ কারণে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধী দলগুলো মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ ঘটছে, যার কারণে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ কোনো স্বীকৃত ব্যবস্থা নয় উল্লেখ করে আবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের দুই-একটি দেশ ছাড়া কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা আদৌ সম্ভব নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোচনা ও সমালোচনা পরিত্যাগ করে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হবে। এতে করে একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না, অপরদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পরিচালনায় কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধানের কোনো সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। সর্বদলীয় সরকারব্যবস্থায় বিদ্যমান সংসদ বহাল থাকবে, তবে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সকল সদস্য পদত্যাগ করবেন।
‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন, যিনি বিগত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। নতুন মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ সদস্য বিদ্যমান সংসদ সদস্য হবেন, তবে তারা এমন ব্যক্তি হবেন যারা বিগত ১০ বছরের মধ্যে কোনো মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এ ছাড়া নতুন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি ১০ শতাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।’
দেশের জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারব্যবস্থা বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আবেদনে।