বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কথায় আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেই বাতাসে নড়তে শুরু করেছে। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে পরিবর্তন আসছে, সত্য-সুন্দরের জয় হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রোববার বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আজ পুরো দেশের মানুষ জর্জরিত। তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। চাল, ডাল, লবণ, তেল- কোনো পণ্যের দামই আর সহনশীল অবস্থায় নেই। মানুষের শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, রাস্তায় শান্তিতে বের হতে পারে না।’
তিনি বলেন, 'আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আর আজ কিছুসংখ্যক মানুষের হাতে রাষ্ট্র দখল হয়ে গেছে। তারা এই রাষ্ট্রকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বিবেচনা করছে। ফ্যাসিস্টের হাতে কখনও কোনো দেশের মঙ্গল হয় না, ধ্বংস হওয়া ছাড়া। গণতন্ত্র ছাড়া কখনও এগুলো ঠিক হবে না।’
মানুষ জেগে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পুরো দেশের মানুষ একবাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, এই সরকারের পতন চায়। তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। আমরা একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই; যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে বাংলাদেশের নির্বাচন নাকি এখন দেশে নেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আবার বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে বাইরের কোনো শক্তি নেই। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য, তারা (সরকার) ভয় পেয়েছে, সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
‘আজকে সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, তোমাকে (শেখ হাসিনা) সুন্দর, সঠিক নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সে কারণে তারা এসব কথা বলতে শুরু করেছে।’
বিএনপি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির গণতান্ত্রিক রাজনীতি আজকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত।’
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। মানে সবচেয়ে উঁচু একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে।
‘ডেঙ্গুতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৪ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কথা শুনে একবারও মনে হয় না, এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আছে।
‘জেলখানায় আমরা যেভাবে সারি করে শুয়ে থাকি, তেমনই মুগদা হাসপাতালের মেঝেতে শিশুরা শুয়ে আছে। এত উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট, তারপরও কেনে বাচ্চারা সঠিক চিকিৎসা পাবে না? কারণ একটাই, শেখ হাসিনার সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’
আওয়ামী লীগকে কূটকৌশলী ও ভয়াবহ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি বাড়িতে হঠাৎ করে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে ৬ জন মহিলা, ৪টি শিশু ও ৪ জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে৷ সঙ্গে নাকি তিন কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে৷’
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে এগুলো কোথা থেকে এলো? কার আনলো? কিভাবে আনলো? যখন আন্দোলন তুঙ্গে থাকে, তখনই জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবার প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি হয়। এখন দেখবেন, জঙ্গির কথা বলে বলে মানুষকে ডাইভার্ট করবে। তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।
‘পশ্চিমা বিশ্বকে আবার জুজুর ভয় দেখাবে। বলবে- এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এভাবে নাটক করতে করতে তারা (আওয়ামী লীগ) এই জায়গায় এসেছে।’
আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্র না হয়ে আরাফাত রহমান কোকো যদি সাধারণ কেউ হতেন তাহলে তার প্রতি অবিচারটা কম হতো। তার প্রতি যে অবিচার হয়েছে এবং তিনি যেভাবে চলে গেছেন এর একমাত্র কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পৃথিবীর যে কোনো সভ্য দেশে হলে সরকার নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাকে বিদেশে পাঠাতো। কারণ ডাক্তাররা বার বার বলছেন, তার চিকিৎসা এখানে আর সম্ভব নয়। তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা উন্নত দেশে, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে করতে হবে। এরা (সরকার) এমন একটি প্রতিহিংসার জায়গায় চলে গেছে যে, মনেপ্রাণে প্রতি মুহূর্তে তারা চায় বেগম জিয়া মরে যান।’
বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শহীদুজ্জামান শহীদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক সজল প্রমুখ।