বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় ফরম পূরণের হিড়িক

  • মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা   
  • ১১ আগস্ট, ২০২৩ ১৫:৪১

গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘এনআইডি নম্বর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে সেখানে, যাকে তাকে এ নম্বর হস্তান্তর করা উচিত নয়। কেননা এ নম্বর দিয়ে অনৈতিক ঘটনা ঘটতে পারে, যার ফলে কোনো ব্যক্তির অপূরণীয় ক্ষতিও হতে পারে।’

বিতরণ হচ্ছে ফরম। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন লাইন ধরে। অপেক্ষা ফরম পূরণের।

গত ১৫ দিন ধরে এমন দৃশ্য দেখা যায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের পদুমশহর গ্রামের মিয়া বাড়ির সামনে।

বৃহস্পতিবার দেখা যায়, মিয়া বাড়ি সংলগ্ন রেলগেট বাজারের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫টি ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যানগাড়ি। এসব গাড়িতে করে লোকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে ফরম পূরণের জন্য।

সেই ফরমে লেখা, ‘বিপুল ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে, শান্তিপূর্ণ অহিংস সাংবিধানিক আইনের দ্বারা গঠিত, অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা বরাবরে পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন।

‘ভ্যাট, ট্যাক্স, সেবার নামে সর্বস্তরের জনগণ থেকে আদায় করা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একটি বড় অংশ, স্বাধীনতার পর থেকেই লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনগণের কষ্টার্জিত এ অর্থ উদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে বিনা সুদে, বিনা জামানতে, সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য এক লক্ষ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের মাধ্যমে পুঁজির জোগান দেয়ার পরিকল্পিত কর্মসূচির আওতার ফল পেতে আগ্রহীদের আবেদনের ছক।’

পুঁজির জন্য ঋণের আবেদনের এ ফরম দিচ্ছে ‘অহিংস গণঅভ্যুথান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। ওই এলাকায় ফরম বিতরণ করছেন ৩৫ বছর বয়সী আরিফ। মুদি দোকানে বসে ফরম পূরণ করাচ্ছেন তিনি।

ফরম পূরণের জন্য নেয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর। ফরম দিয়ে বলা হচ্ছে নিজ দায়িত্বে পূরণ করে রাতে অথবা পরের দিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কেউ কেউ নিজে নিয়ে পূরণ করছেন ফরম। আবার আরিফ নিজেও কারও কারও ফরম পূরণ করে দিচ্ছেন।

গত ১৫ দিনে উপজেলার হাজার হাজার নারী-পুরুষ মিয়া বাড়ির গেট বাজারে আরিফের দোকানে এসে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে ঋণের আবেদন করেন। আরিফ তাদের জানিয়ে দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হবে।

কী বলছেন ফরম পূরণকারীরা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের শাপলামিল এলাকা থেকে গিয়ে ফরম পূরণ করা আঁখি বেগম বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে জেনেছি, এক লাখ টাকা করে ঋণ দেয়া হবে। এ জন্য মোবাইল নম্বর ও ভোটার আইডি কার্ড নম্বর লাগবে। এ জন্য আরিফ ভাইয়ের কাছে এসে ফরম পূরণ করে দিলাম। আমার গ্রামের অনেক মহিলাই এসে ফরম পূরণ করে গেছেন।’

কবে ও কারা এ টাকা দেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘কিছুই জানি না’ উত্তর দেন তিনি।

উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের অটোচালক ছাদ্দাম মিয়া বলেন, ‘এক লাখ টাকা করে ঋণ দেবে। তাই আমার গ্রাম থেকে গত কয়েক দিন যাবত প্রতিদিনই অটোভর্তি যাত্রী নিয়ে আসছি। আজও ছয়জনকে নিয়ে আসছি। তারা ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর আর মোবাইল নম্বর দিয়ে ফরম পূরণ করে দিয়ে যাচ্ছেন।’

স্থানীয়রা বিষয়টিকে প্রতারণা সন্দেহ করে পুলিশকে অবগত করলেও থামেনি ফরম বিতরণ। তাদের অভিযোগ, পুলিশকে জানানো হলে তারা এসে কথা বলে যায় আরিফের সঙ্গে, তবে তাতেও এ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।

ফরম বিতরণকারীর স্বজনের ভাষ্য

ফরম বিতরণকারী আরিফের ভাই আশরাফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টাকা দেয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, ফরম পূরণের কয়েক দিন পর এসব নম্বরে ফোন দিয়ে বিভিন্ন বাহানায় ১০০ করেও যদি টাকা নেয় ‘অহিংস গণঅভ্যুথান বাংলাদেশ’, তাহলে তাদের কোটি টাকা আয় হবে। ঋণ দেয়ার বিষয়টি ভুয়া। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই এ ফরম পূরণ করতে নিষেধ করেছেন।

কী বলছে পুলিশ ও প্রশাসন

সাঘাটা থানার ওসি রাকিব হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ পাঠিয়ে ফরম বিতরণ বন্ধ করা হয়েছিল। আরিফ নামের ওই যুবককে ফরম বিতরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘এনআইডি নম্বর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে সেখানে, যাকে তাকে এ নম্বর হস্তান্তর করা উচিত নয়। কেননা এ নম্বর দিয়ে অনৈতিক ঘটনা ঘটতে পারে, যার ফলে কোনো ব্যক্তির অপূরণীয় ক্ষতিও হতে পারে।’

এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ারও পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে আরিফের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কৌশলে স্থান ছাড়েন তিনি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর