বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারী পুলিশ সদস্য না থাকায় বিপাকে পিবিআই

  •    
  • ১০ আগস্ট, ২০২৩ ২২:১৭

দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ না থাকায় নারী আসামি গ্রেপ্তার, নারী ভিকটিমকে মেডিক্যাল করানো থেকে শুরু করে নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নারী আসামি কিংবা ভিকটিম সংক্রান্ত তদন্তেও বিপাকে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের।

বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্য সংকট নতুন কিছু নয়। তবে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর মতো সংস্থার জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে নারী পুলিশের সংখ্যা শূন্য। যেসব ইউনিটে আছে সেখানেও সংখ্যাটা নামমাত্র। এতে করে নারী সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে।

পিবিআই-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ না থাকায় নারী আসামি গ্রেপ্তার, নারী ভিকটিমকে মেডিক্যাল করানো থেকে শুরু করে নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নারী আসামি কিংবা ভিকটিম সংক্রান্ত তদন্তেও বিপাকে পড়তে হয় কর্মকর্তাদের।

এছাড়া আদালত থেকে নারী নির্যাতনের সিআর মামলার একটা বড় অংশ তদন্তের ভার দেয়া হয় পিবিআইকে। নারী পুলিশ স্বল্পতায় এই মামলাগুলোর তদন্তে ধীরগতি নেমে আসে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় পিবিআই কর্মকর্তাদের।

পুলিশের বিশেষায়িত এই তদন্ত সংস্থায় মোট কর্মরত আছেন ২০৭০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে নারী সদস্য মাত্র ৭৯ জন। ৪৩ জন বিভিন্ন জেলা ইউনিটে কর্মরত। বাকি ৩৬ জন পিবিআই হেডকোয়ার্টার, মেট্রোপলিটনগুলো এবং পিবিআই-এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) বিভাগে কর্মরত।

পিবিআইয়ে জেলা ও মেট্রোপলিটন মিলে মোট ইউনিট রয়েছে ৪৭টি। এর বাইরে হেডকোয়ার্টার ও স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) ইউনিট রয়েছে।

জেলা ইউনিটের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে ২৭টিতে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছে। বাকি ১৫টি পুরোপুরি নারী পুলিশ সদস্যহীন।

আবার ২৭টি ইউনিটে নারী পুলিশ থাকলেও তাদের সংখ্যা সীমিত। ১৩ ইউনিটে ১ জন, ১১ ইউনিটে ২ জন এবং ৩ ইউনিটে ৩ জন করে নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে যে ১৫ জেলায় নারী পুলিশ না থাকা অবস্থায় সেখানে নারী ভিকটিম কিংবা নারী আসামি সংক্রান্ত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হয়?

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলায় কোনো নারী সদস্য নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ইউনিটের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ না থাকায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়। তখন বিভিন্ন জায়গায় রিকুইজিশন দিয়ে আমাদের নারী পুলিশ সদস্য নিয়ে আসতে হয়।

‘আবার যাদের কাছে রিকুইজিশন দেয়া হয় তাদের ওখানেও নারী পুলিশ বেশি থাকে না। তাছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে কাজ করতেও ওই নারী পুলিশরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে তদন্ত ব্যাহত হয়। কাজ থেমে না থাকলেও তদন্ত কার্যক্রমের গতি কমে যায়।’

একই ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অফিসে কোনো নারী পুলিশ নেই। নারী সেবা প্রার্থী, মামলার নারী বাদীর কথা শোনা, নারী ভিক্টিম উদ্ধার, মেডিক্যাল করানো, নারী আসামি গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা নারী আসামিকে রিমান্ডে পেলে তখন নারী পুলিশ সঙ্গে রাখতে হয়। এটা আইনেই বলা আছে।

‘এছাড়া নারী ভিকটিমের অভিযোগ শোনার জন্যও নারী পুলিশের প্রয়োজন। এক কথায় নারী সংক্রান্ত সব বিষয়েই নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি অপরিহার্য। আমাদের ইউনিটে তা না থাকায় এসব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হয়।’

পিবিআই নওগাঁ জেলার পরিদর্শক (অ্যাডমিন) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নারী সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মুশকিলে পড়ে যাই। অনেক সময় জেলা পুলিশে রিকুইজিশন দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় নারী পুলিশ সদস্য কখন আসবেন। এর মধ্যে আসামি পালিয়েও যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় নিজেদের ইউনিটে নারী পুলিশ থাকাটা খুবই জরুরি।’

নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী ও শিশু মামলা যেহেতু তাদের কাছে নিয়মিত আসছে তাই অবশ্যই নারী পুলিশ লাগবে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি পুরুষ হন, সেক্ষেত্রে ভিকটিমের জন্য সেটা বিব্রতকর হয়।

‘শুধু পিবিআই নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে নারী পুলিশ সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়া যেসব নারী পুলিশ আছেন তাদেরও দক্ষ করে তুলতে হবে। কারণ তারাও দক্ষ নন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী আসামি গ্রেপ্তার করতে হলে নারী পুলিশ থাকতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। ধর্ষণ মামলাগুলো পুরুষ পুলিশ সদস্য তদন্ত করছেন এটাও তো বিব্রতকর।

‘যেহেতু পিবিআই এর মূল লক্ষ্য সেবা নিশ্চিত করা, তাই আইনে নারী পুলিশ থাকা বাধ্যতামূলক না হলেও, সেবা নিশ্চিত করতে এই সংকটের সমাধান করা উচিত। এই বাধা অতিক্রম করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাও সবার সামনে ক্লিয়ার করা উচিত।’

নারী সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে পিবিআই-কে অন্য ইউনিট থেকে নারী পুলিশ সদস্য রিকুইজিশন দিয়ে আনতে হয়। ছবি: ফাইল ছবি

স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে আলামত নিয়ে যদি পুরুষ পুলিশ সদস্য কাজ করেন সেক্ষেত্রে নারী ভিকটিমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এ অবস্থায় তারা অভিযোগ দিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।

তিনি বলেন, ‘নারী সেবাদাতাকে বাদ দিয়ে নারী উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব? নারীরা ধর্ষণের শিকার, সাইবার ক্রাইমের ভিকটিম কিংবা যে কোনো সমস্যা হলেও অভিযোগ করতে আসতে চান না। কারণ দায়িত্বশীলরা প্রয়োজন অনুযায়ী নারী পুলিশ তৈরি করতে পারেননি। শুধু কনস্টেবল নয়, নারী অফিসারও বাড়াতে হবে।’

সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক মনে করেন সব ইউনিটেই পর্যাপ্ত নারী পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে এবং এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী পুলিশ সব ইউনিটেই থাকা উচিত। এটা ঠিক যে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে হয়তো পিবিআইকে চাহিদা অনুযায়ী নারী পুলিশ দেয়া যায় না। নারী আসামিকে গ্রেপ্তার, মেডিক্যাল করানো, জিজ্ঞাসাবাদসহ নারী ও শিশু সংক্রান্ত সব কাজে অবশ্যই নারী পুলিশ থাকতে হবে।’

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন প্রয়োজন হয় তখন থানা বা জেলা থেকে সহায়তা নিয়ে থাকি। আমরা নারী জনবল বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। পর্যাপ্ত নারী পুলিশ পেলে সব ইউনিটেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর