বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রামে বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬, নেই উদ্ধার তৎপরতা

  •    
  • ১০ আগস্ট, ২০২৩ ২১:১২

বন্যায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩ জন। পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলো। কোথাও কোথাও ফিরেছে বিদ্যুৎ।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সোমবার রাত থেকে কার্যত পানির নিচে চলে যায় চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চল। পরদিন বিকেল পর্যন্ত পানি বেড়ে তলিয়ে যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলা।

চট্টগ্রামে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতকানিয়া উপজেলা। এই উপজেলার সবটাই পানির নিচে ছিল অন্তত ৩০ ঘণ্টা। সোমবার রাত থেকে বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।

সাতকানিয়া-বান্দরবান সড়কও তলিয়ে যায় পানিতে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন থাকায় বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্কও। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধস নামে পুরো অঞ্চলে। নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছুটতে থাকে বন্যাদুর্গতরা। এতে অনেকেই তলিয়ে যায় পানির স্রোতে। মঙ্গলবার থেকে তলিয়ে যাওয়াদের মরদেহ ভেসে উঠতে থাকে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চন্দনাইশে ২, সাতকানিয়ায় ৭ ও লোহাগাড়ায় ৪ জনসহ অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্যায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩ জন।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। নিহতদের মধ্যে সাতকানিয়ায় ৬, লোহাগাড়ায় ৪, চন্দনাইশে ২, বাঁশখালী ও রাউজানে একজন করে এবং চট্টগ্রাম মহানগরে ১ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সাতকানিয়ায় ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।

এদিকে চন্দনাইশেও একজন নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছেন থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।

তবে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘সাতকানিয়া উপজেলায় ৬ জন নিহত ও ৩ জন নিখোঁজ ছিল। বিকেলে নিখোঁজ তিনজনের মধ্যে একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এখন নিহত মোট ৭ জন ও নিখোঁজ ২ জন।’

সে হিসাবে এখন পর্যন্ত চলমান বন্যায় চট্টগ্রামে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও পদুয়া এলাকা থেকে দুই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন কলেজছাত্র সাকিব ও অটোরিকশা চালক আব্দুল মাবুদ। এদিন সাতকানিয়ায় পাওয়া যায় আরও ৪ মরদেহ। তারা হলেন- সাতকানিয়া পৈরসভার সাকিব, ইদ্রীস, বদিউল আলম ও আব্দুর রহীম।

এর আগে সোমবার চট্টগ্রামে জলাবদ্ধ সড়কে ডুবে মারা যান কলেজছাত্রী নিপা পালিত। পরদিন লোহাগাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জারিফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর বুধবার একই উপজেলায় ভেসে উঠে কৃষক আসহাবের মরদেহ।

একই দিন সাতকানিয়ায় শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস, হেলাল, সোভা কারণ এবং চন্দনাইশে আবু সৈয়দ ও আনাস নামে দাদা-নাতির মরদেহ ভেসে ওঠে। এদিন ভোরে কর্ণফুলী থেকে শাহেদ হোসেন বাবু নামের এক তরুণ উদ্যোক্তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার বিকেলে রাউজানে মৎস্য খামার থেকে ফেরার পথে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।

এছাড়াও শনিবার বাঁশখালীতে অতিবৃষ্টির কারণে দেয়াল ধসে মিজবাহ নামে এক শিশু মারা যায়।

আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সাতকানিয়ায় ২ ও চন্দনাইশে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

কোথাও কোথাও ফিরেছে বিদ্যুৎ

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন পুরো সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকা। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। তবে বুধবার রাত থেকে এসব এলাকার পানি নেমে যাওয়াসাপেক্ষে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাতকানিয়া ছাড়া দক্ষিণের সব উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। সাতকানিয়ায়ও কাজ চলছে, দ্রুতই সংযোগ দেয়া যাবে বলে আশা করছি।’

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল শুরু

দক্ষিণ চট্টগ্রামে আকস্মিক বন্যায় পানির নিচে চলে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক। তবে সড়ক থেকে পানি নামায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে অধিকাংশ যানবাহনই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে বাঁশখালী সড়ক ব্যবহার করছে।

দোহজারী হাইওয়ে থানার ওসি খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, ‘শুরুতে খুব ধীরে ধীরে যান চলাচল করছিল। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে।’

তবে মহাসড়কে যান চলাচল করলেও বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলো। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় এখন‌ো নৌকাই যোগাযোগের একমাত্র বাহন হয়ে আছে স্থানীয়দের কাছে।

বন্যার পানি নামতে শুরু করার পর থেকে ধীরে ধীরে মোবাইল নেটওয়ার্কও সচল হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নেই উদ্ধার তৎপরতা

দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হলেও উদ্ধার তৎপরতায় খুব বেশি জোর দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। পেশাগত কারণে এলাকার বাইরে থাকা অনেকেই এখনও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, ‘আমরা নিহতদের তথ্য সংগ্রহ ও ত্রাণ কর্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত আছি। উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর