টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সোমবার রাত থেকে কার্যত পানির নিচে চলে যায় চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল। পরের দিন বিকেল পর্যন্ত পানি বেড়ে তলিয়ে যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলা।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতকানিয়া উপজেলা। এ উপজেলার সবটাই পানির নিচে ছিল অন্তত ৩০ ঘণ্টা। সোমবার রাত থেকে বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সাতকানিয়া-বান্দরবান সড়কও তলিয়ে যায় পানিতে।
দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন থাকায় বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্কও। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধস নামে পুরো অঞ্চলে। নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছুটতে থাকে বন্যাদুর্গতরা। এতে অনেকেই তলিয়ে যায় পানির স্রোতে।
ডুবে যাওয়া লোকজনের মরদেহ ভেসে উঠতে থাকে মঙ্গলবার থেকে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চন্দনাইশে দুজন, সাতকানিয়ায় তিনজন ও লোহাগাড়ায় চারজনসহ অন্তত ৯ জনের মরদেহ ভেসে ওঠে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও পদুয়া এলাকায় পাওয়া যায় আরও দুই মরদেহ।
ওই দুজন হলেন আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া মো. সাকিব ও পদুয়া এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশার চালক আবদুল মাবুদ।
সকাল সাতটার দিকে আমিরাবাদের খান সাহেব পাড়া এলাকা থেকে সাকিব ও ১০টার দিকে পশ্চিম পদুয়া থেকে মাবুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সাকিব মঙ্গলবার ও মাবুদ সোমবার পানিতে ডুবে যান।
লোহাগাড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
‘এখন পর্যন্ত সাতকানিয়ায় মোট চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে আমাদের কাছে নিখোঁজের কোনো তথ্য নেই।’
এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সাতকানিয়ায় চারজন ও চন্দনাইশে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
কোথাও কোথাও ফিরেছে বিদ্যুৎ
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন পুরো সাতকানিয়াসহ লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকা। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা, তবে বুধবার রাত থেকে এসব এলাকার পানি নেমে যাওয়া সাপেক্ষে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাতকানিয়া ছাড়া দক্ষিণের সব উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। সাতকানিয়ায়ও কাজ চলছে আমাদের। বিকেল নাগাদ সংযোগ দেয়া যাবে বলে আশা করছি।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
দক্ষিণ চট্টগ্রামে আকস্মিক বন্যায় পানির নিচে চলে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক, তবে সড়ক থেকে পানি নামায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অধিকাংশ যানবাহনই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে বাঁশখালী সড়ক ব্যবহার করছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, ‘শুরুতে খুব ধীরে ধীরে যান চলাচল করেছিল। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে।’
মহাসড়কে যান চলাচল করলেও বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বিছিন্ন হয়ে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলো। এতে বন্যা কবলিত এলাকায় এখনও নৌকাই যোগাযোগের একমাত্র বাহন হিসেবে রয়েছে স্থানীয়দের কাছে।
বন্যার পানি নামতে শুরু করার পর থেকে ধীরে ধীরে মোবাইল নেটওয়ার্কও সচল হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।