বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুলিশ ফাঁড়ি এখন মার্কেট

  • সালাহউদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার   
  • ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:১৪

মৌলভীবাজারে সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না, তবে ফাঁড়ির বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারছি না, যেহেতু আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখব।’

দূর থেকে চোখে পড়ে একটি সাইনবোর্ড। এতে পুলিশ ফাঁড়ি লেখা থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। সামনে থেকে ভেতরে দেখা মেলে আলু, পেঁয়াজ, চা পাতাসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানের।

দোকানিরা কেউ চা পাতা বিক্রি করেন, কেউ বা পেঁয়াজ। নেই পুলিশের সেবাদাতা কিংবা সেবাগ্রহীতা।

এমন একটি পুলিশ ফাঁড়ির দেখা মিলবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের পুরাতন বাজারে।

শ্রীমঙ্গল থানার পাশাপাশি শহরের নিরাপত্তার জোরদারের জন্য পুরাতন বাজারে স্থাপন করা হয় ফাঁড়িটি। দীর্ঘদিনের এ ফাঁড়ি এখন মার্কেট।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে একেকটি দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। ১৫টি দোকানঘর রয়েছে নবনির্মিত মার্কেটটিতে, তবে কী প্রক্রিয়ায় দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে বা কত টাকা অগ্রিম নেয়া হয়েছে, সে তথ্য জানা যায়নি।

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অর্গানোগ্রামে শ্রীমঙ্গল শহর পুলিশ ফাঁড়ি এখনও আছে। সেই পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে একজন উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ তিন পুশি সদস্যের পদায়নও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এই এসআই ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় অবস্থান করে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মিতব্য দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া উত্তোলনের কাজ করেন।

মৌলভীবাজার থেকে সম্প্রতি বদলি হওয়া (২৭ জুলাই) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জাকারিয়া জেলায় যোগদানের পর পুলিশ ফাঁড়িতে মার্কেট নির্মাণের উদ্যাগ নেন।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সাবেক এসপি মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল পৌরসভাস্থ ক্ষুদ্র একটি জায়গা অব্যবহৃত পড়ে ছিল। সেখানে কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্থানীয় এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে স্থানটি বেদখল হওয়ার উপক্রম হয়। উক্ত স্থানে সরকারি অর্থয়ানে আশু কোনো ফাঁড়ি নির্মাণের প্রকল্প নেই জেনে জেলা পুলিশের উদ্যোগে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে কয়েকটি ক্ষুদ্র সেমি পাকা টিনশেড দোকান নির্মাণ করা হয়।

‘উক্ত অস্থায়ী স্থাপনায় টহল পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বসার জন্য বাথরুমসহ স্থান রাখা হয়েছে। দোকান বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিকট হতে শুধু নির্মাণ ব্যয়টুকুই নেয়া হয়েছে। বড় পরিমাণ অর্থ নেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা একেবারেই সঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিকট হতে প্রদেয় অর্থ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য জানা যেতে পারে। এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র কোনো অসততা বা অস্বচ্ছতার স্থান ছিল না। দোকানপ্রাপ্তরা প্রতি মাসে যে ভাড়া প্রদান করে, তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তাদের ফেরত দেয়া হয় প্রাথমিক এককালীন প্রদত্ত অর্থের বিপরীতে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ অর্থ জেলা পুলিশের কল্যাণ ফান্ডে জমা হয়, যা দিয়ে জেলা পুলিশ তার সদস্যদের কল্যাণে এবং অসহায় ও দুস্থদের জন্য কল্যাণধর্মী ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গ্রহণ করে।’ সাবেক এসপি আরও বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর বাজেটে ভবিষ্যতে উক্ত স্থানে কোনো পুলিশ ফাঁড়ি বিল্ডিং নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানদাররা দ্রুত উক্ত স্থান ছেড়ে দিতে লিখিত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।’সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বের শ্রীমঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির জায়গার ওপর ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক এসব বরাদ্দ নিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তারা ঘর নেয়ার অগ্রিম দিয়ে একেকটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তাদের অগ্রিমের টাকা থেকে ৮০ শতাংশ ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে কর্তন হবে। তবে দোকান কোটার জন্য ব্যবসায়ীরা কত টাকা অগ্রিম দিয়েছেন, তা জানা যায়নি।এই মার্কেটে দোকান কোটা ভাড়া নিয়েছেন মিটন পাল। তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া নিয়েছি। অগ্রিম টাকার ৮০ পারসেন্ট প্রতি মাসে ভাড়া হিসেবে কাটা হবে। বাকি ২০ পারসেন্ট প্রতি মাসে প্রদান করি।

‘এই ফাঁড়িতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছেন এসআই জিয়াউর রহমান। তার বসার কোনো জায়গা না থাকলেও তিনি মার্কেটের ভাড়া তোলেন।’

এ বিষয়ে এসআই জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে বদলি হয়ে গেছি। এখান থেকে এর আগে ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলাম। ভাড়া আমি তুলি না; এটা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বলতে পারবেন।’শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারের কাছে ফাঁড়ি থাকলে শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সহজ হতো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওপর মহলের সিদ্ধান্ত যেহেতু, তাই এ নিয়ে কিছু বলতেছি না, তবে চাইলে মার্কেটের পেছনে জায়গা আছে এবং থানাতেই প্রচুর জায়গা আছে। সেখানেও (ফাঁড়ি) করা যাবে।’

বর্তমানে ফাঁড়িতে কাগজে-কলমে কেউ কর্মরত আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসআই একজন ছিল। সে এখন অন্য বিভাগে আছে, তবে কনস্টেবল কর্মরত আছে ফাঁড়িতে।’

কতজন কনস্টেবল ফাঁড়ির দায়িত্বে আছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি ওসি।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারে সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না, তবে ফাঁড়ির বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারছি না, যেহেতু আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর