চলমান প্রবল বর্ষণে কার্যত পানির নিচে থাকা দক্ষিণ চট্টগ্রামে পানি কমতে শুরু করেছে। সেসঙ্গে আস্তে আস্তে বের হচ্ছে বন্যায় নিখোঁজদের মরদেহ।
বন্যার পানিতে তলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে নিখোঁজদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে।
সর্বশেষ বুধবার বিকেলে চন্দনাইশের দোহাজারি এলাকা থেকে এক বৃদ্ধ ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সম্পর্কে তারা দাদা-নাতি।
নিহতরা হলেন- বাঁশখালীর বাসিন্দা ৮১ বছর বয়সী আবু সৈয়দ এবং তার ১২ বছর বয়সী নাতি আনাস। তারা মঙ্গলবার সকালে চন্দনাইশ থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে পানিতে তলিয়ে যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা দুজন চন্দনাইশে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মঙ্গলবার পানি ওঠায় তারা বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাড়িতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার সকালে দোহাজারিতে পানির স্রোতে ভেসে যান দু’জনই। পরে বুধবার বিকেলে দোহাজারির পাঠানিপুল এলাকার পৃথক স্থান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
এর আগে, সোমবার বিকেল ও রাতে লোহাগাড়ার আমিরাবাদে এক কৃষক আসহাব মিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ বন্যার পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ হন। মঙ্গলবার জারিফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকালে উদ্ধার হয় আসহাব মিয়ার মরদেহ।
সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৭ ওয়ার্ডের একই পরিবারের ৪ জন নৌকাযোগে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বের হলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।
নিখোঁজরা হলেন- ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৫ বছর বয়সী আব্দুর রহিম, মো. সেলিমের ৩ বছরের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম, ৪ বছরের জান্নাতুল ফেরদৌস ও মো. আরিফের ৪ বছরের কন্যা সানজিদা আক্তার।
সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল্লা চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডেরর মানুষ পানিবন্দি। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ঘর পানির নিচে। ইতোমধ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারজন নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। তাদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, নিখোঁজ চারজনের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের শিশুটির মরদেহ শঙ্খ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে।’
এদিকে সাতকানিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সতিপাড়ার বাসিন্দা মো. রফিকের ১৬ বছরের ছেলে সাইদুল ইসলাম নাবিল মাদ্রাসার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজস হয়েছে। তার ভাই মিজানুর রহমান আসিফ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একই পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়াজর পাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইদ্রিস।
নিখোঁজ মোহাম্মদ ইদ্রিসের ভাতিজা রেজাউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) মাগরিবের সময় বিকেল ৬টার দিকে সাতকানিয়া কলেজের পাশের ব্রিজ (স’ মিল) এলাকায় পা পিছলে পড়ে গেলে তীব্র স্রোতে ভেসে যান মোহাম্মদ ইদ্রিস। তাকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
এই প্রতিবেদন তৈরির সময় নিখোঁজের মধ্য থেকে নিখোঁজ শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া একের পর এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া যেন এক মৃত্যুপুরী আর শোকের বিরানভূমি।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল নিখোঁজ হওয়া মো. বেলাল নামের এক যুবকের মরদেহ উপজেলার সোনাকানিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা আজকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। এই সংখ্যা হয়ত আরও বেশি, কিন্তু নেটওয়ার্কের কারণে সব খবর আমরা পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ঢেমশা এলাকার একজন নিখোঁজ রয়েছেন।’
এদিকে, চন্দনাইশেও এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
সাতকানিয়ার সতিপাড়া এলাকায় সাইদুল ইসলাম নাবিল নামের এক কিশোর নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই মিজানুর রহমান আসিফ। এ ছাড়াও লোহাগাড়ায় সাকিব নামের এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।