বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চকরিয়া-পেকুয়ায় ২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি, দুর্ভোগ

  • ইউসুফ বিন হোছাইন, চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার)   
  • ৯ আগস্ট, ২০২৩ ২২:০৫

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৮টি এবং পেকুয়ার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে এখনও। এই দুই উপজেলায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি তিনদিন ধরে। চুলায় আগুন নেই, খাবার পানির সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এখানকার মানুষ।

বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধস ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই উপজেলায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট। চকরিয়ায় পাহাড় ধস ও বন্যার পানিতে চারজনের মৃত্যু এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। পেকুয়ায় মারা গেছেন একজন।

অতিবৃষ্টির কারণে সোমবার (৭ আগস্ট) বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপা পড়ে দুই শিশু প্রাণ হারায়। তারা হলো বরইতলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বরঘোনা এলাকার মোহাম্মদ নাজেম উদ্দিনের ৫ বছর বয়সী ছেলে সাবির ও এক বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম। একই দিনে শাহ আলম, পিতা: জাকের হোসেন, বাড়ি লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকার একজন পানিতে ডুবে মারা যান।

মঙ্গলবার সাহারবিল ইউনিয়নে ১২ বছর বয়সী কিশোরী সকাল ১০ টার দিকে বন্যার পানিতে ভেসে যায়। বেলা ২টায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। সে সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালি গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম প্রকাশ সেলিম খলিফার মেয়ে। একই পরিবারের আরো একটি মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরী।

বুধবার চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর থেকে আনোয়ার হোসেন নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত আনোয়ার হোসেন সুরাজপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।

একই দিন পেকুয়া উপজেলা সদরের বেতুয়াবাজার মাতবরপাড়া এলাকার নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বন্যার পানিতে মারা যান। এ তথ্য নিশ্চিত করেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা।

চকরিয়া উপজেলা সদরের রাস্তায় পানি থৈ থৈ। ছবি: নিউজবাংলা

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৮টি এবং পেকুয়ার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে এখনও। এই দুই উপজেলায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি তিনদিন ধরে।

চুলায় আগুন নেই, খাবার পানির সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এখানকার মানুষ। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা নিয়ে নিরাপদ পথ খুঁজছে দুর্গত এলাকার মানুষজন। খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসিরা।

বন্যার পানিতে সব ধরনের ক্ষেত খামার তলিয়ে গেছে। পুকুর ও মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষিরাও সর্বস্ব হারিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে ৩ দিন যাবত বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ।

অনেকেই নিজের শেষ সম্বলটুকু রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে বাকরুদ্ধ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চকরিয়া- পেকুয়া থেকে লোকজন সরানো ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে নৌবাহিনীর একটি দল।

আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭ মিলিমিটার। আগামী ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার ক্ষতিসাধন পুষিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন তারা। চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব রেজাউল হক সওদাগর বলেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়িনি।

প্রায় মার্কেটর নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচতলায় বেশির ভাগ গোডাউন থাকে। যেখানে ভরপুর মাল থাকে। অনেকের আন্ডারগ্রাউন্ড দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করায় কোননো মালপত্র বের করতে পারেনি। কোনরকমে নিজেরাই প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।

পৌর শহরের ব্যবসায়ীদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন হয়েছে। বুধবার একটু একটু কমতে শুরু করেছে পানি। পানি পুরোপুরি কমে গেলে নতুন করে ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আরও সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যাবে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদি জানান, উপজেলা পরিষদ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ২০ টন শুকনো খাবার ১৮টি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব খাবার বণ্টন করা শুরু হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, পেকুয়া উপজেলায় ১৫ টন চাল, শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের অনুকূলে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আট হাজার বানবাসি মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে।

নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার চারশ’জনের জন্য খাবার দিয়েছি। অনেকে পায়নি যার কারণে আজ এক হাজার জনের জন্য খাবার দিচ্ছি। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এ বিষয়ে তদারকি রাখছে।

এ বিভাগের আরো খবর