এগিয়ে আসছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অর্ধশতাধিক আমলা নেমেছেন রাজনীতির মাঠে। তাদের জনসংযোগ ও প্রচার করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনী অধ্যাদেশে বা ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অর্ডার’ তথা আরপিওতে বলা হয়েছে, ‘সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সামরিক বাহিনী হতে পদত্যাগ কিংবা অবসর গ্রহণের তিন বছরের মধ্যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
এই অধ্যাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল এ সংক্রান্ত রিট আবেদন করেছিলেন। এ বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে দেয়া রুলে আদালত বলে, ‘অবসর গ্রহণের তিন বছর পার না হওয়া পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না?’ অবশ্য আদালতে বিষয়টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নিকট অতীতে (৩১ জুলাই) সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসান (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন) নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছেন। আগামীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় আরও অনেকেই কাজ করছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ যে নাম এসেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব খাজা মিয়ার। তিনি পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কয়েকটি পথসভা ও মতবিনিময় সভা করেছেন।
এসব সভায় তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে সরকার তাকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে।
আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি যেমন সিরাজগঞ্জে তার নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন, তেমনি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়েও তার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি প্রায়ই সেখানে গিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।
সদ্য অবসরে যাওয়া স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও নিজ এলাকা সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সাবেক সচিব জিল্লার রহমানও রাজশাহী থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী বলে সূত্রটি জানায়।
সচিব থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনও নির্বাচনে আগ্রহী এবং তার নির্বাচনী এলাকায় তিনি ঘনঘন যাচ্ছেন।
নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকা আমলাদের মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ। তিনি জামালপুর থেকে নির্বাচনের জন্য আগ্রহী বলে খবর পাওয়া গেছে। আরেক সাবেক আইজিপি শহীদুল হকও মনোনয়নের জন্য শরীয়তপুরে কাজ করছেন।
বর্তমানে সংসদ সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সচিব মনজুর আহমেদ ফরিদপুর থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নির্বাচনের মাঠে বেশ ভালোভাবেই রয়েছেন। সাবেক সচিব আবদুল মান্নান তার কিশোরগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী। সেখানে আগে থেকেই সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ।
এ বছরের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়া যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহউদ্দিনও তার নির্বাচনি এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনিও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমলাদের মনোনয়নের আগ্রহের বিষয়টি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নজরে আনলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ভালো খবর, তবে আমলা হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয় রাজনীতিবিদ হিসেবে। এখন আমলারা যদি অবসরের পর তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে সেসব যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তাদের মনোনয়নে আইনগত বাধা না থাকে এবং মনোনয়ন পাওয়ার অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে বিজয়ী হওয়ার সামর্থ্য থাকে, তাকে অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।’
আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে হাতেগোনা কয়েকজন আমলাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সচিব পর্যায়ের আমলা ছিলেন মাত্র দুজন। পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে এবং অবসরপ্রাপ্ত সচিব মনজুর আহমেদ ফরিদপুরের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।