সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র আর জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ আসা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘এ বছর পৃথিবীর ২২টি দেশে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ কী এমন অপরাধী দেশ যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা আর জাতিসংঘ- ঘুরে ঘুরে সবাই শুধু বাংলাদেশে?
‘আমরা কী বিপদে আছি! ঘুরে ফিরে সবাই শুধু এখানে আসে। নাইজারের খবর নেই। সোমালিয়া, সুদান বা কঙ্গোর খবরই নেই। এসব নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।’
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক ছাত্রী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে ‘বাংলার মাতা, বাংলাদেশের নেতা’ শীর্ষক এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে রাজনীতিটা কেমন হয়ে গেছে। আদর্শ কোথায়! গণতন্ত্র কেথায়! মূল্যবোধ কোথায়! মানবাধিকার কোথায়!
‘সিএনএন-এর একটা রিপোর্ট বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগ যত বাড়ছে ততই তার পক্ষে জনমত বাড়ছে। যারা মানবাধিকারের প্রবক্তা, যারা আমাদের গণতন্ত্রের শিক্ষা দেয়, সবক দেয়, আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে যারা সমালোচনা করে সে দেশের এই অবস্থা দেখে ব্যক্তিগতভাবে অসহায় বোধ করলাম। এটা দেখে আমি অবাকই হয়েছি।’
কাদের বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে আজকে যারা গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের মাতব্বর, তাদের নিজেদের দেশে গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের এই অবস্থা কেন? তাদের দেশে মানবাধিকারের পতাকা ভূলুণ্ঠিত কেন? যারা আমাকে সবক দেয় তারা ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে না কেন? নাইজারের চলমান সংকটের কোনো সমাধান নেই। আমেরিকা আর ইউএন কি পারছে সুদানের দুই প্রেসিডেন্টের কলহ বন্ধ করতে? দুষ্টু ছেলে ইসরায়েলকে তো কেউ কিছু বলছে না।’
রোহিঙ্গা নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘উখিয়ার জনসংখ্যা চার ৫ লাখ। তার ওপর আবার ১১ লাখ রোহিঙ্গা। বাড়তে বাড়তে এখন ১২/১৩ লাখ। বাংলাদেশ কীভাবে এই লোকগুলোকে খাওয়াবে? এদের কারণে আমাদের ইকোলজি আর ট্যুরিজমের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের কক্সবাজার ধ্বংসের মুখে। এখন আন্তর্জাতিক সাহায্যও কমে গেছে। এখন প্রায় আমাদের ওপরই এদের ভরণ-পোষণের ভার বর্তেছে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যেরা অনেক মাইগ্রেন্টকে খাবার ও আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের কী অপরাধ? জাতিসংঘ কি শুধু শেখ হাসিনার প্রশংসা করে দায়িত্ব শেষ করবে? উন্নত দেশগুলো আশ্রয়দানের জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেই দায়িত্ব শেষ করবে? আজকে আমাদের বিবেক এসব প্রশ্ন করে। কিন্তু জবাব পাই না। বিশ্ব বিবেককের কাছে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন,
‘বঙ্গমাতার শুভ জন্মদিনে আবারও একটি প্রশ্ন আমি করতে চাই। আবারও জানতে চাই, একজন মানুষের কয়টা জন্মদিন থাকে?
‘মির্জা ফখরুল, মাঝে মাঝে আপনি এমন ভাব দেখান যে আপনার মতো গণতান্ত্রিক, বিবেকসম্পন্ন মানব বাংলাদেশে বোধহয় দ্বিতীয়জন নেই। মিথ্যা কথাকে কেমন সুন্দর করে বয়ান করেন। আপনার দেশনেত্রীর ৬টি জন্মদিবস কেন? এই প্রশ্নের জবাব আমি পাইনি। সত্যকে যদি এড়িয়ে যান তাহলে আপনাদের রাজনীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই।’
‘আবারও কেক কাটবেন। আবারও ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করবেন। আর কত?’
‘এ থেকে বুঝে নিন এরা কত নিষ্ঠুর? এরা কত অন্ধ আক্রোশে ভোগে। আর এরা রাজনীতিতে কত প্রতিশোধপরায়ণ! এ-ই যাদের অবস্থা তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে।’ যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের যারা খুনি, যারা খুনের মাস্টারমাইন্ড, তাদের হাতে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র আর মানবাধিকার নিরাপদ নয়। এই মহলটি আজ সংঘাতে মেতে উঠেছে।
‘কিন্তু তারা জানে না, এই মাটির গভীরে আমাদের শেকড়। এই মাটির বাইরে আমরা যাব না, যাওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের নেই। আপনাদের নেতাই পালিয়ে আছে। সাহস থাকলে রাজপথে মোকাবেলা করুক। আসুক না বাংলাদেশে। দেখি তার সাহস কত!’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চার/পাঁচদিন ধরে দেখছি বিএনপির একটু নরম সুর। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এক দফারও মনে হয় বেলা শেষ। দম ফুরিয়ে এসেছে। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। শুকিয়ে গেছে চোখ-মুখ।
‘বাংলাদেশ থেকে নিয়ম অনুযায়ী ওরা এলে আমরা যাই আর আমরা গেলে তারা আসে। চায়নার সাথেও এটা হয়েছে। এবার ভারতেও গেছে আমাদের প্রতিনিধি দল। আমাদের পক্ষ থেকে এটা নিয়ম আছে। প্রতিনিধি তাদেরও আসবে আমাদেরও যাবে। করোনার কারণে আমরা নিয়মটা দেরিতে পালন করছি। ভারতে প্রতিনিধি যাওয়ার পর বিএনপি নেতাদের দুচিন্তায় ঘুম নেই। আওয়ামী লীগ ভারতে গিয়ে আবার কী করছে সেই চিন্তায় তাদের ঘুম নেই।
‘ভারত আমাদের বন্ধু। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। কোনো বন্ধু আমাদের ক্ষমতায় বসাবে না। ক্ষমতায় বসাবে দেশের জনগণ। জনগণের সঙ্গে আমরা আছি।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবনা এখনও আসেনি। কিন্তু এই সরকার জনগণের সরকার। বিবেকের সরকার। আমরা একটা কাজ করব। এরপর এই সিদ্ধান্তটা সঠিক না বেঠিক সেটি জনগণের কাছে শুনব। সেখানে কোনো কারেকশনের প্রয়োজন হলে সেটি করে দেবো।
এটাই জনগণের সরকার, এটাই শেখ হাসিনার সরকার। এ নিয়ে আবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য শুরু করেছে। ঢালাওভাবে এই আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সেজন্য নতুন করে রিকাস্ট হচ্ছে।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও বক্তব্য দেন।