প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। এটা চাই ওটা চাই, কখনও এমন চাহিদা প্রকাশ করেননি। যে কারণে তার আব্বা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা পাশে থাকাতে বাবা কিন্তু সফল হয়েছেন। সাধারণ নারীদের মতো আমার মা যদি বলতো, আজকে গয়না দাও, কালকে ফার্নিচার দাও, এটা ওটা দাও এমন করলে তো দেশ স্বাধীন করতে পারতেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবাকে মেরে ফেলল। মা বের হয়ে আসলেন। তারা বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন। মা বললেন, তোমরা যেহেতু তাকে মেরে ফেলেছো, আমাকেও গুলি করে মেরে ফেলো। আমি কোথাও যাবো না। জীবনের পাশাপাশি মরণেও আমার বাবার সাথী হয়ে চলে গেছেন মা।’’
বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা বলেন, ‘বাবা রাজনীতি করেছেন, মা সংসারসহ সব গুছিয়ে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকে তিনি একটা মানবিক চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছেন। বাবার রাজনৈতিক কারণে জীবনের যে চড়াই উতরাই, মাকে কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। মাকে দেখেছি কখনও হতাশ হতেন না। সব সময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করত। তারা ক্ষুধার অন্ন যোগাতে পারত না। চিকিৎসা পেত না। তাদের থাকার কোনো ঘর ছিল না। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য গড়ে তোলা, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ও সাধনা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী থাকতে দলের ভেতরে সমস্যা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে যান। তখন দলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমার বাবা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আম্মা এ ব্যাপারে কোনো দিন অভিযোগ-অনুযোগ করেননি। তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বা ১৯৬০ সালে বের হলেন, আবার ১৯৬২ সালে গ্রেপ্তার হন, ১৯৬৪ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, আবার ১৯৬৬ সালে। জেলাখানায় মা যখন আব্বার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন বলতেন, তোমার ঘর-সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না, সেটা আমি দেখব। আব্বা কারাগারে থাকলে দলের কাজও তিনি করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবার সংগ্রামের ভেতরে ছিল দেশের স্বাধীনতা। এটা পৃথিবীর কেউ না জানুক, মা কিন্তু জানতেন। কারণ, আব্বা মার সঙ্গে সব সময় কথাগুলো বলতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মাকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলায় মাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আসেন ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফার প্রস্তাব নিয়ে। আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি শুনতেন এবং জেলখানায় গিয়ে আব্বার কাছে সেই কথাগুলো বলতেন। আব্বা যে নিদের্শনা দিতেন সেটা নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘‘আইয়ুব খান আব্বাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আলোচনা করার কথা বলে। আমার মা সেখানেও বলেন, প্যারোলে না। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করবে। সবাইকে ছেড়ে দেবে। মুক্ত মানুষ হিসেবে যাবে। যখন আব্বা প্যারোলে গেলেন না, আমাদের নেতারা বাড়িতে এসে বললেন, আপনি জানেন? তারা (পাকিস্তানিরা) তো মেরে ফেলবে, আপনি তো বিধবা হবেন। তখন মা বলেছিলেন, আরও তো নেতা আছে, তাদের স্ত্রীরাও বিধবা হবে। আমি একা সধবা থাকার চেষ্টা করব তাদের বাদ দিয়ে? আপনারা একটু চিন্তা করেন, কত দৃঢ় মনোবল ছিল আমার মায়ের।’’