বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন কবি

  • প্রতিনিধি, বাগেরহাট   
  • ৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৮:২৮

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে অবস্থানকালে রোববার সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় আনার পথে তিনি মারা যান।

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিককে নামাজে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় বৃষ্টির মধ্যে কবির নিজ হাতে বাবা-মায়ের নামে গড়া সামসু উদ্দিন-নাহার ট্রাস্টের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

কবির শেষ ইচ্ছা অনুসারে কোনো আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন জানানো ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে জানাজায় এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

দেশবরেণ্য এই কবি এক সপ্তাহ আগে ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে অবস্থানকালে রোববার সকালে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশালে নেয়া হয়।

বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশকিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় কবিকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মাদারীপুরের রাজৈরে রাত ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে কবি মোহাম্মদ রফিকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবির শেষ বিদায়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত রফিক, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধাসহ কবির বিভিন্ন স্বজন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিক।

কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সবার বড়। তার শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান।

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিলে মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান।

অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শরীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

কবি মোহাম্মদ রফিক ঢাকায় থাকলেও এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পৈতৃক ভিটায় সব ভাইবোন মিলে সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। কবি মোহাম্মদ রফিক সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আমৃত্যু ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সালে দেশবরেণ্য এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।

মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এ বিভাগের আরো খবর