সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার প্রকৃত অপরাধীরা এখনও শনাক্ত না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আমরা করছি। আমরা যে তদন্ত প্রতিবেদন দেব, এখানে যেন কোনোভাবেই কোনো নির্দোষ ব্যক্তি ভিকটিমাইজ না হয়, এই বিষয়টি মূলত আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। আমরা এই সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং গুরুত্ব দিয়ে করছি।
‘খুব কম হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে এমনটি হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিতে আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, তবে এই মামলার ক্ষেত্রে আমরা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পাঠিয়েছি। এই হত্যা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি আলামত। যাদেরকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে যাদেরকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের আলামত কিন্তু পাঠানো হয়েছে।’
মঈন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওই কোম্পানি থেকে পাঠানো প্রতিবেদন আমরা যাচাই-বাছাই করে দুইজন সাসপেক্ট পেয়েছি, যাদেরকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষা থেকে যে দুইজন সাসপেক্ট পাওয়া গেছে, তাদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। আমাদের ধারণা ওই সাসপেক্ট দুইজন সম্ভাব্য অপরাধী। এই বিষয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এই দুইজনকে শনাক্ত করার পর আমরা বলতে পারব যে আর কতদিন লাগবে।’
১০০তম বারের মতো তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকের বিষয় না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা। কেউ যেন এখানে ভিক্টিমাইজ না হন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো ব্যক্তি একদম ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না, তারপরও আদালতে প্রতিবেদনে তার নাম চলে যায়।
‘আবার অনেকে আছেন, যিনি ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলে আছেন। আমরা এই ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ করতে অনেক সময় কিন্তু দেখা গেছে বেশি সময় লেগেছে।’
সন্দেহভাজন দুজন অপরাধীকে শনাক্ত করা র্যাবের জন্য অনেক কঠিন হচ্ছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘটনার পরবর্তীতে আলামত সংগ্রহ করা অনেক কঠিন কাজ ছিল। এই সাংবাদিক দম্পতি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। ঘটনার পর সেখানে অনেক মানুষ গিয়েছিলেন। এখানে আলামতের একটি বিষয় ছিল।’
এখন পর্যন্ত র্যাব, পুলিশ যতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে ওই দুইজন সন্দেহভাজন ছিল কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে র্যাবের কমান্ডার বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহ হয় আমরা ২৫ জনের আলামত ডিএনএর পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম। পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আমরা দুজন সন্দেহভাজন পেয়েছি যাদের শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করা গেলে এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় প্রকৃত কারা জড়িত, এই ধরনের কংক্রিট তথ্য আমরা পাইনি।’
এখন পর্যন্ত যে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে তদন্ত হয়েছে, আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সুনিশ্চিত না তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না।’