প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘এখনই গুলি করতে শুরু করেছে। এখনই রাতে বাড়িতে থাকতে দেয় না। মিথ্যা মামলার ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির হয়।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় সাজা দেয়ার প্রতিবাদে এবং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপিপন্থী সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার পতনে বিরোধী দলগুলোর এক দফার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে। আর সে লক্ষ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে।
‘দেশের মানুষ পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছে- এখন আর অন্য কোনো দাবি নয়, একমাত্র দাবি সরকারের পদত্যাগ। ঠিক তখনই এক দফা দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই রায়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য আজ সংগ্রাম করছে। তারেক রহমান আজ শুধু একজন নেতা নন, তিনি আজ দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের নেতা।
‘বাংলাদেশের যেসব মানুষ সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, তারা মনে করে জিয়াউর রহমান সার্বভৌমের পতাকা টিকিয়ে রেখেছেন। সেই লক্ষ্যে এখন দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে পর পর দুটি নির্বাচনকে হাস্যকর করে দিয়ে এ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আবারও ক্ষমতায় যেতে তারা পাঁয়তারা শুরু করেছে।
‘ডিসির পরিবর্তন, এসপির পরিবর্তন, পোস্টিং, প্রশাসনে হাজার হাজার লোককে পদোন্নতি। একটাই উদ্দেশ্য, আগের মতো আবারও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা বৈতরণী পার হবে।’
প্রশাসনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। দেশ ও জনগণের পক্ষে থাকুন। নিপীড়িত জনগণের পাশে থাকুন। অন্যায় আদেশ মানবেন না।’
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা পর পর দুটি নির্বাচন করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এবার আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না। এবার অবশ্যই জনগণের ভোটে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিতে আজ সব দল এক হয়েছে।’
নেতাকর্মীরা এখনও হামলা-মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাতে নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারে না, জামিনে থাকলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এক ছাত্রনেতার শরীরে দেখলাম ৪৮টি গুলির চিহ্ন। তার হাত-পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে।
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এর নাম গণতন্ত্র? গত কয়েক বছরে অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা ভয়ে ঠিকমতো লিখতে পারেন না।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা শহীদুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ইউট্যাব) নেতা অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের নেতা অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম, অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী আলফে ছানী প্রমুখ।