বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও বহুমুখী প্রতিভার প্রশংসা করেছেন তার বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘শেখ কামাল আজকে বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তো এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না।’
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা, সেটা ছিল প্রবল, কিন্তু কখনও কোনো নেতা হবার চেষ্টা বা কোনো পদে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে পয়সা বানানোর চিন্তা কখনও তার মাথায় ছিল না; বরং এ ব্যাপারে সে অত্যন্ত সতর্কও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে সে অনেক দায়িত্বশীল ছিল। কারণ আমার আব্বা তো বেশির ভাগ সময় ছিলেন জেলখানায়। সেই ছোট্ট বয়স থেকে মায়ের পাশে থেকে সংসারের কাজে কামাল সবসময় পাশে থাকত। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ ছোট্টবেলা থেকে গড়ে উঠেছিল।’
শেখ কামাল পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ কামাল পড়াশোনার দিকে অত্যন্ত মনোনিবেশ করত। আমাদের বাসায় তো সবসময় লোকজন ভরা থাকত। তারপরও তার পড়াশোনা সে চালিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ মাসটা আমাদের শোকের মাস। এ মাসে কামালের জন্মদিন। কামাল আমার ছোট। আমরা পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোন; খেলার সাথী। আন্দোলন, সংগ্রামও একসঙ্গে ছিলাম। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তার যে অবদান রয়েছে সেটা চিরদিন মানুষ স্মরণ করবে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। নির্মম সে ঘটনায় শেখ কামালও নিহত হন। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট অগ্রগামী।’
তিনি বলেন, ‘আজকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, যার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল শেখ কামাল। এতে কোনো সন্দেহ নাই। তার যে বহুমুখী প্রতিভা, এই বহুমুখী প্রতিভাটা বিকশিত হওয়ার আগেই চলে গেল এই পৃথিবী থেকে।’
শিল্পপতি, সমাজের বিত্তবানদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা যদি এভারেস্ট বিজয় করতে পারে, খেলাধুলায় এত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারে, তাহলে এটা তো বাংলাদেশেরই সুনাম বাড়বে। আমাদের ছেলেমেয়েরা সীমিত সুযোগের মধ্য দিয়েও যথেষ্ট সুনাম বয়ে আনছে। সুনাম বৃদ্ধির জন্যও আমাদের দরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা।
‘সাংস্কৃতিক চর্চা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে যেমন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাগে, তেমনি বেসরকারি খাতে যারা রয়েছেন, তাদেরও পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এগুলো বিকশিত হতে পারে না। সারা দেশে অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। তাদের খুঁজে বের করুন। তারা বিশ্বে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’
যারা খেলাধুলা থেকে অবসর নেবে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
বিত্তশালীদের ক্রীড়াবিদদের কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অনুদান দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ।
শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে বক্তব্য দেন আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত আবদুস সাদেক ও সাবিনা খাতুন।