বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁয় বেড়ে চলেছে ধান উৎপাদন ব্যয়, দেখা নেই বৃষ্টির

  • প্রতিনিধি, নওগাঁ   
  • ৪ আগস্ট, ২০২৩ ১৪:০৭

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। আগস্টজুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যায় সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে, তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছে তাদের খরচ বাড়বে।

দেশের ধান-চালের চাহিদার বড় অংশ মেটায় উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। বৃষ্টির জন্য যেন হাহাকার চারদিকে। এমন বাস্তবতায় আবাদ করা আমনের জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের এ সময়ে বৃষ্টির পানি থাকে, কিন্তু এ বছর একেবারে ভিন্ন চিত্র।

অনাবৃষ্টির কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে কৃষি জমিতে। পানি সংকটে কারও কারও রোপা বীজ মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও রোদে জমি ফেটে চৌচির। এতে অনেকটা প্রকৃতিনির্ভর আমন চারা রোপণ ব্যাহত হচ্ছে।

কৃষকদের বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে সেচযন্ত্র। শুরুতেই বেড়ে যাচ্ছে চাষের খরচ। এতে করে শুধু সেচ খরচ বাবদ কৃষকের ব্যয় বেড়ে গেছে।

চালু রয়েছে প্রায় সব সেচযন্ত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।

সেচের জন্য মাঠে মাঠে ৪ হাজার ৮৬৮টি গভীর নলকূপ, ৪৮ হাজার ৭৯টি অভীর নলকূপ ও ২ হাজার ২২৭টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র রয়েছে।

সব মিলিয়ে জেলায় ৫৫ হাজার ১৭৪টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯৫টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৩৭ হাজার ৬৭৯টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত।

খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।

অনাবৃষ্টিতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ

কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে।

আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে। এ মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে।

সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

কৃষদের দুর্দশা বাড়ছে

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে দিন ধরে আমাদের এলাকায় এক পশলা বৃষ্টিও হয়নি। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যেতে বসেছে।

‘বাধ্য হয়ে সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে খরা, আরেকদিকে চলছে লোডশেডিং। এ কারণে সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি সময় লাগছে।’

আত্রাই উপজেলার সোনাতলা গ্রামের গ্রামের কৃষক আবদুস ছালাম জানান, চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। আমনের বীজতলাও প্রস্তুত। আগেভাগে মাঠ থেকে আমন ধান কেটে সেই জমিতে রবি শস্য আবাদের জন্য জুলাইয়ের মধ্যেই ক্ষেতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমিতে চারা লাগিয়েছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অন্য জমিগুলো চারা লাগানোর জন্য সঠিক সময়ে প্রস্তুত করতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে।

বদলগাছী উপজেলা ভান্ডারপুর গ্রামের কৃষক শুকবর আলী বলেন, ‘আগে এক বিঘা জমিতে পানি দিয়ে ভেজাতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে খরচ পড়ত, কিন্তু ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছর থেকে সেচ খরচ বেড়ে গেছে।

‘এখন বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে গড়ে ৪০০ টাকা করে খরচ পড়ে। সাত-আটবার করে সেচ দিতে হলে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ পড়ে প্রায় তিন হাজার টাকা। যদি বৃষ্টি পর্যাপ্ত হতো, তবে পানির খরচ লাগত না।’

যা বলছে কৃষি বিভাগ

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া কিছুটা ব্যহৃত হচ্ছে। কৃষক নিজস্ব সেচযন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের চেষ্টা করছেন, তবে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই অতটা চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। আগস্ট মাসজুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যায় সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে, তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছে, তাদের খরচ বাড়বে।

‘গত বছরেও মৌসুমের শুরুতে তেমন বৃষ্টি ছিল না, তবে শেষের দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এ বছরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে বলে আশা করা যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর