দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বিস্তীর্ণ সাগর সৈকত আর পাহাড়। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। এর সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই সড়ক ধরে সাগরের তীর ঘেঁষে ছুটে যাওয়া যায় সুদূর টেকনাফ পর্যন্ত।
সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এবার সেই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাঙন ধরেছে। দু-একটি স্পটে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ এখনই মেরামত করা না হলে মেরিন ড্রাইভ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
টেকনাফের পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্রায় ৬০ মিটার সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক রক্ষাকবজ হিসেবে ব্যবহৃত জিও ব্যাগ দুর্বল হয়ে গেছে। আর শক্ত বাধা না থাকায় ইতোমধ্যে সড়কটিকে গ্রাস করতে বসেছে সাগর।
বৃহম্পতিবার সকালে টেকনাফের পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার প্রায় ৬০ মিটার সড়ক সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে যায়। এছাড়া গত দুই দিনে টেকনাফের বাহারছড়া, হাদুরছড়া, দক্ষিণ মুন্ডার ডেইল এলাকায় দশটি স্পটে মেরিন ড্রাইভে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
মেরিন ড্রাইভ সড়ক দেখতে আসা নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকদের কাছে একটি বাড়তি আকর্ষণ এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক। দেশের একমাত্র মেরিন ড্রাইভ সড়কটি রক্ষায় টেকসই রক্ষাকবজ তৈরি করা দরকার। নইলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে টেকনাফ সর্বোপরি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। টেকনাফের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হবে। আর তাতে করে দুর্ভোগে পড়বেন হাজারো পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।’
জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বরাবরই আগস্ট মাসে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। সে হিসাবে সামনের সময়টাতে জোয়ারের পানির উচ্চতা ও ঢেউয়ের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে মেরিন ড্রাইভ সড়কে বড় ভাঙনের সৃষ্টি হবে। তাই সড়কটি রক্ষায় এখনই জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। অস্থায়ী জিও ব্যাগ নয়, এজন্য দরকার স্থায়ী সমাধান।’
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম বলেন, ‘সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে মেরিন ড্রাইভের বেশ কয়েকটি স্পটে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক। অবশ্য সড়কটির ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি। এ কারণে ঢেউয়ের প্রভাবে মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি স্পটে ভাঙন ধরেছে। তবে ভাঙন রোধে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
সড়কটির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কের ভাঙন শুরু হওয়া অংশে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে জোয়ারের কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী জিরো পয়েন্ট থেকে টেকনাফের সাবরাং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে হলেও নির্মাণ তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর।