বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্মরণকালের বৃহৎ জনসভা দেখল রংপুর!

  •    
  • ২ আগস্ট, ২০২৩ ২৩:৪০

জনসভাস্থল ছিল রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। তবে নগরীর প্রতিটি এলাকার সড়ক, অলিগলি ছিল লোকে লোকারণ্য। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে মানুষের ভিড়ে মাটিতে পা ফেলাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুধবারের রংপুরের জনসভাকে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ বলছেন স্থানীয়রা। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সব রাস্তা এসে মিশেছে জেলা স্কুল মাঠে। মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। লোকজনের ভিড় ছিল মাঠের চারপাশের সব রাস্তায়ও।

জনসভাস্থল ছিল রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। তবে নগরীর প্রতিটি এলাকার সড়ক, অলিগলি ছিল লোকে লোকারণ্য। রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থল ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত সবাই ধৈর্য ধরে যার যার অবস্থানেই অবস্থান করেন।

রংপুর নগরীর মানুষ বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেন সড়কে সড়কে মানুষের মিছিল। তারা অনেকটা পথ হেঁটেই যাচ্ছেন জিলা স্কুল মাঠের দিকে।

সকাল থেকেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দলের নেতাকর্মীরা দলে দলে আসতে শুরু করেন। তাদের খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে মানুষের ভিড়ে মাটিতে পা ফেলাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

বিভাগের আট জেলা রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা শহর ও সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলো থেকে বাস, মাইক্রোবাস, জিপ, কার ও চার্জার অটোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে চলে আসেন। মোটর সাইকেলযোগেও জনসভাস্থলে এসে হাজির হন অনেকে।

বাইরে থেকে আসা গাড়িগুলো রাখতে আগে থেকেই ২১টি পয়েন্টের ব্যবস্থা করেছিল ট্রাফিক বিভাগ। গাড়ি থেকে নেমে তারা হেঁটে সভাস্থলে যান। এ সময় অনেকের হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা শোভা পায়।

বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠ ও আশপাশ এলাকায় উপস্থিত জনতার একাংশ। ছবি: পিআইডি

জনসভা শুরুর আগে দুপুর ১২টার মধ্যে নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। মাঠের ভেতরের পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মী নগরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে জিলা স্কুল মাঠ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের পায়রা চত্বর, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় হয়ে ধাপ আটতলা মসজিদ মোড় পর্যন্ত।

এছাড়া জিলা স্কুল সংলগ্ন রাধাবল্লভ, কাচারি বাজার, ডিসি মোড়, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, কেরানীপাড়ার প্রতিটি অলিগলিতে ছিল মানুষের ঠাসাঠাসি ভিড়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় চত্বর, ভূমি অফিস, ডায়াবেটিস অফিস, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, সেটেলমেন্ট অফিসসহ আশপাশের সব অফিস চত্বরেই ছিল ভিড়ে ভিড়াক্কার অবস্থা। পুরো নগরী যেন হয়ে ওঠে জনসভাস্থল।

নগরীর শালবন এলাকার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মুই অমপুরের কোন জনসভাত এতো মানুষ দ্যাকো নাই বাহে।’

সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু বললেন, ‘এতো বড় জনসভা রংপুরে এর আগে কখনও হয়নি।’

মহাসমাবেশ ঘিরে তৈরি হওয়া জনস্রোত স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের গায়ে ছিল লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের গেঞ্জি ও টুপি। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নৌকার আদলে তৈরি অটোতে করে সমাবেশে যোগ দেন।

তাদের স্লোগান ছিল- ‘শেখ হাসিনার আগমন- শুভেচ্ছা স্বাগতম,’ ‘আওয়ামী লীগ সরকার- বার বার দরকার’, ‘শেখ হাসিনার দুই নয়ন- রংপুরের উন্নয়ন’, ‘উন্নয়নের সরকার- বার বার দরকার’, ‘পদ্মা সেতু সরকার- বার বার দরকার’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ইত্যাদি।

সমাবেশ শুরুর আগের রাতেই রংপুরে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে ট্রাকে চেপে রাতেই ২০ হাজার নেতাকর্মী রংপুর নগরীতে চলে আসেন। রাতে জনসভাস্থলের কাছাকাছি নগরীর চিকলি বিল পার্ক এলাকায় অবস্থান করেন তারা।

রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকেও এভাবে অনেক নেতাকর্মী মঙ্গলবার রাতেই রংপুরে চলে আসেন। জনসভাস্থলের সামনের দিকে আগেভাগে জায়গা করে নিতেই তাদের রাতেই চলে আসা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে আসেন সাবেরা সুলতানা হ্যাপী। রাতটা কোনোমতে আত্মীয়ের বাসায় কাটিয়ে সকালেই চলে আসেন জনসভাস্থলে।

রকি ইসলাম নামে পীরগাছার এক শিক্ষক জানালেন, তিনি স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে এসেছেন।

বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জনসভা হলেও শহরের মড়ক এমনকি অলিগলিতেও উপচে পড়ে মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা

২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ সফরের প্রায় ৫ বছর পর জেলায় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় পুরো রংপুর সাজে নতুন রূপে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত কয়েকশ’ অস্থায়ী গেট, ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে পুরো রংপুর অঞ্চল নতুন রূপে সাজে। বিভাগীয় শহরের প্রতিটি গলি ও বাইলেনও সাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সংবলিত পোস্টার, রঙিন ব্যানার এবং ফেস্টুনও লাগানো হয়।

বুধবার দুপুর ১২টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশের কার্যক্রম। জাতীয় সঙ্গীত শেষে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়।

এরপর রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আগত নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন। রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর