জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে এক শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেই শাখা ছাত্রলীগের নারীকর্মীকে যোৗন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
সোমবারের এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিতে পাল্টাপাল্টি দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর নাম সৌরভ দাশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সৌরভ দাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে এসে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মী সামিরা মাহমুদ মিথী এবং রিসাত আরার সঙ্গে সৌরভ দাশ নামের ওই শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটির হয়। এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডার মধ্যেই ওই শিক্ষার্থীকে টেনে হিঁচড়ে মেডিক্যাল সেন্টারের বাইরে নিয়ে এসে সহযোগীদের নিয়ে মারধর করেন কয়েকজন।
এ বিষয়ে আহত শিক্ষার্থী সৌরভ দাশ বলেন, ‘আমি মেডিক্যাল সেন্টারে রক্তের প্রেসার মাপতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকের সাথে কথা বলার সময় দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রিসাত আরা নামের একজন শিক্ষার্থী আমাকে চেয়ার থেকে উঠতে বলেন। আমি তাকে আমার চিকিৎসা শেষ করার পরে চেয়ারে বসতে বলি। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উনি আমার ওপর চড়াও হন।
‘ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই আপু আমাকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান। এরপর ইকবাল মাহমুদ রানা, সৈকত, মিনুন মাহফুজ, মিরাজ হোসাইন, সজীব বুদ্ধসহ আরও বেশ কয়েকজন তাকে কয়েক দফায় মারধর করেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিতে দেয়া সৌরভ দাশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন অর্থনীতি বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ রানা, ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মিনুন মাহফুজ, ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হোসাইন, সজীব, সামিরা মাহমুদ মিথি, রিসাত আরা। সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।
অন্যদিকে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে প্রক্টর অফিসে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নারীকর্মী ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা মাহমুদ মিথী।
যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে সামিরা মাহমুদ ও রিসাত আরা ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট করেন। সেখানে সৌরভের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে ইভটিজিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। এমনকি গায়ে হাত তোলার কথাও বলেন তারা। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এ বিষয়ে সমালোচনা করলে তারা ফেইসবুক পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
সামিরা মাহমুদ মিথী তার অভিযোগপত্রে বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারে যাই। সেখানে আমি এবং আমার এক জুনিয়র রিসাত আরা ১৬তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের সৌরভ নামের এক ছেলের দ্বারা প্রথমত বেয়াদবিমূলক আচরণ পাই, সেঅকথ্য ভাষায় গলাগালি এবং যৌন হয়রানিমূলক ইঙ্গিত দেয়, সাথে ‘তোকে দেখে নেবো’ এরকম হুমকি প্রদান করে৷ আমি ১২তম ব্যাচ জানার পরই এমন ভাষায় কথা বলে।
পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সামিরা মাহমুদ মিথিকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনকে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীকে কল দেয়া হলেও নম্বর ব্যস্ত পাওয়া যায়।
এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা সৌরভ দাশ নামের ওই শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় পেয়েছি। মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’