চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৩৫তম সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিনেটে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ইস্যুতে কথা বলেন সদস্যরা।
চবির এ আর মল্লিক প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে রোববার ৩৫তম সিনেট সভায় ৪০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
ওই সময় ছাত্র রাজনীতি, সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন, নতুন হলের প্রস্তাব, শাটল ও বগি বৃদ্ধির দাবিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন চবি সিনেট সদস্যরা।
ছাত্র রাজনীতি সীমিত করার পরামর্শ
সিনেট সভায় আলোচনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মাঝেমধ্যে অনেক দুঃখজনক খবর আমরা পাই। ছাত্র রাজনীতি সব দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম-বেশি আছে। সেটা যখন মাত্রারিক্ত হয়ে যায়, তখন শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।
‘আমি বলব না ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমি বলব ছাত্রদের বুঝিয়েসুজিয়ে তারা রাজনীতি করবে, আমার মনে হয় অনুষদগুলো যদি রাজনীতিমুক্ত রাখা যায়, ভালো হয়। তারা রাজনীতি করবে একটা পর্যায় পর্যন্ত, যেন ছাত্রদের শিক্ষার পরিবেশ ঠিক থাকে। ছাত্র রাজনীতিকে যদি একটু সীমিত করা যায়, শিক্ষার মানকে যদি আরেকটু উন্নত করা যায়, ভালো হয়।’
গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব
গবেষণা ও গবেষণা খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন সিনেট সদস্য ও বি.সি.এস.আই.আর. ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলতাফ আলী শেখ।
তিবি বলেন, এই সেশনে ৪৩টি পাবলিকেশনের কথা বলা হয়েছে। বিসিএসআইআর যদি ৪০০ পাবলিকেশন করতে পারে, তাহলে চবির ক্ষেত্রে ৪০০ কোনো ব্যাপার না।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাবির বাজেট ৯০০ কোটি টাকা। চবির আরও কাছাকাছি যাওয়া উচিত ছিল। আমার মনে হচ্ছে কম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতায় বলেছিলেন, গবেষণায় ২২ শতাংশ বাজেট রাখতে।
‘আপনাদের গবেষণায় বাজেট বড়াতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য গবেষণা লাগবে। গবেষণা ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না।’
সিনেট সদস্য ও গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ‘অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের গবেষণা বরাদ্দ অনেক কম। র্যাঙ্কিংয়ের জন্য যে পরিমাণ গবেষণা দরকার, তা কমপক্ষে ১ হাজার পাবলিকেশন।
‘গবেষণা খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেটা আগামী অর্থ বছরে ৩০ কোটি টাকা হলে গবেষণা ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। ৪৩টি গবেষণা শুধু রিসার্চ সেলে। অন্যান্য গবেষণাগুলো যোগ হলে ৫০০ ছাড়িয়ে যেত।’
সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচন ও সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরি নির্বাচনের দাবি
সিনেটে প্যানেলের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচন ও সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরি নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সিনেট সদস্য ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, বিশেষ একটি অধিবেশন করে উপাচার্য নির্বাচন করা হোক।’
সিরাজ উদ দৌল্লাহ আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটে ডিনদের কোনো প্রতিনিধি নেই। গত বছর আপনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, সিন্ডিকেটে সব পর্ষদে নির্বাচন দেয়ার। এরপর একবছর হয়ে গেছে। ৭৩ অ্যাক্টে বলা হয়েছে, কোনো পদ খালি হলে নির্বাচন দিতে হবে।’
ওই সময় তিনি দীর্ঘদিন সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন না হওয়া ও সিন্ডিকেটে ‘সিনেট টু সিন্ডিকেট প্রতিনিধি’ প্রেরণের বিষয়ে সমালোচনা করেন।
বেগম রোকেয়ার নামে হল করার প্রস্তাব
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার নামের একটি হল করার প্রস্তাব দিয়েছেন সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়া।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেগম রোকেয়ার নামে হল আছে, কিন্তু আমাদের চবিতে বেগম রোকেয়ার নামের কোনো হল এখনও হয়নি। তাই আমি বেগম রোকেয়ার নামে একটি হল প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করছি।’
শাটল ট্রেন ও বগি বৃদ্ধির দাবি
সিনেটে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যা লাঘবে শটল ট্রেন ও বগি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সিনেট সদস্য ড. ওমর ফারুক রাসেল।
তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ট্রেনের ব্যবস্থা করা। সেটি সম্ভব না হলে নতুন বগি যাতে বৃদ্ধি করা হয়।’
ওমর ফারুক রাসেল আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে হলগুলো চালু করার দাবি জানাচ্ছি। ইন্টারনেট নিয়ে আমরা সমস্যা ভোগ করছি। আমরা অনেক দিন ধরে অভিযোগ করছি।
‘এখনও কোনো সমধান পাইনি। আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি জানিয়েছি৷ সেই দাবি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।’
ড. ওমর ফারুকের প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গমাতার জন্মদিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন চবি উপাচার্য।