‘আগুন সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ আদালতে না তুলতে বলেছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর জামিন-সংক্রান্ত আবেদনের শুনানিকালে রোববার আদালত এ কথা বলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলে, ‘আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।’
পরে আদালত নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর জামিন আবেদনের শুনানি দুই মাসের জন্য মুলতবি করে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মীরধা। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক।
২০১৩ সালে করা এ মামলায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে আদালত। এ ধারাবাহিকতায় রোববার আদালতে হাজির হন তদন্ত কর্মকর্তা।
শুনানির শুরুতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, ‘এ মামলায় অনেক আসামি রয়েছেন। তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় প্রয়োজন। আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে।’
তখন হাইকোর্ট বলে, ‘সে আমেরিকা গেছে না কি ইসরায়েল গেছে, এসব আমরা দেখব না।’
পরে আদালত তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে বলে, ‘তদন্ত শেষ করতে এত সময় নিচ্ছেন কেন? এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবেন না?’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ মামলায় ১৮০ জন আসামি। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।’
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘সিনিয়রের সঙ্গে (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) যোগ করে আমি কিছু সাবমিশন রাখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘একই ধরনের মামলায় আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ ওই জামিন স্থগিত করে দেয়।’
সারওয়ার হোসেন বাপ্পী আরও বলেন, ‘এরা (বিএনপি) তো আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে।’
এ সময় হাইকোর্ট বলে, ‘আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। কোর্ট তো ১৮ কোটি মানুষের।’
পরে আদালত এ মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় দিয়ে মুলতবি করে।
২০১৬ সালের ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)।
পরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পর দিন ১৬ মে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ওই বছরের ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর নামে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসলাম চৌধুরী ওই বছরের ৫ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক-বহির্ভূত রাষ্ট্র ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যার কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আসামিরা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের জন্য দেশে সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।