যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানী ঢাকার সব প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
শুক্রবার বিকেলে এক দফা দাবিতে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, ‘শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব আমরা।
‘সরকারের উদ্দেশে বলছি, এই অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার চেষ্টা করবেন না। পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা চালাবেন না। তা করলে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠবে। তখন এর দায় আপনাদের নিতে হবে।
জোনায়েদ সাকি এর আগে তার বক্তব্যের শুরুতে হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়া বিএনপি কর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ দেশে ঐতিহাসিক ও জরুরি মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। আজকে আমরা শপথ নেব- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমরা লড়াই অব্যাহত রাখবো।
‘বিদ্যমান সরকার, রাষ্ট্র এবং আইন ব্যবস্থা বহাল রেখে এটি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার, রাষ্ট্র ও আইন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
জুনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তারা আগেরবার রাতে ভোট ডাকাতি করেছে। এবার দিনে ভোট ডাকাতির জন্য আরপিও সংশোধন করেছে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেও যেন সেটি জায়েজ করা যায় সেই ব্যবস্থা করেছে।’
তিনি বলেন, পুলিশ ও র্যাব আজ আওয়ামী লীগের হয়ে পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়েছে। মোবাইল ফোন চেক করেছে- কে কোন দলের সমাবেশে যাচ্ছে। আর বিএনপির সমাবেশে গেলে তাদের গ্রেপ্তার করে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এর জবাব জনগণকে একদিন তাদেরকে দিতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে বিদেশিরা দেশে হস্তক্ষেপ করছে। আমরা বলি, দরজা ভাঙা রেখে চোরকে ঢুকতে দিলো কে? দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন বন্ধ করে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে তাদের কথা বলার ক্ষেত্রটা তৈরি করে দিল কে?
‘ভিসা নীতি দেয়ার মতো ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে এই আওয়ামী লীগ। তাই এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারব না। এই সরকারকে আর একদিন ক্ষমতায় রাখা মানে দেশকে বিপদে ফেলা।’
গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, ‘৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি দল আজ গুণ্ডা বাহিনী তৈরি করে বিএনপির পিছু পিছু হাঁটছে। তারা যেদিন কর্মসূচি দিচ্ছে একই দিন পাল্টা কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য, পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করা। এটি মানুষকে ভয় দেখানো আর ঘরে আটকে রাখার ষড়যন্ত্র।
‘মানুষ আগামীকাল (শনিবার) থেকে প্রতিরোধ শুরু করবে। তাহলে এই সরকার আর পালানোর জায়গা পাবে না।’
ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছে: রব
সমাবেশে সরকারকে উদ্দেশ করে জাতীয় সমাতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব বলেন, ‘জনসভায় আসা অপরাধ না। তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন, গায়েবি মামলা দেন। আমরা কর্মসূচি দিলে পাল্টা কর্মসূচি দেন! এসব করে দেশটাকে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছেন!
‘কনফুসিয়াস সরকারের পথ ধরবেন না। এর পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। আজ থেকে আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। রাজপথে থাকবো। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেবো। তারপরও আপনাদের ক্ষমতায় থাকতে দেবো না।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের বলছি- আপনাদের বেতনের টাকা আমরা দেই। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। অনেক হয়েছে। এবার হাত গুটিয়ে নিন। আর বাড়াবাড়ি করবেন না।’
শেখ হাসিনাকে ভোট চোর বললে তাকে অপমান করা হয়: মান্না
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সমাবেশে আগতদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা স্লোগান দিচ্ছেন, শেখ হাসিনা ভোট চোর। এটা বললে তাকে অপমান করা হয়। আরে, এ তো ভোট ডাকাত। শেখ হাসিনা প্যাথলজিক্যাল লায়ার। তার মুখ দিয়ে কখনও সত্য বের হবে না।’
শান্তি সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে মান্না বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করলাম বাড়াতে। কিন্তু টেনেটুনে ইলাস্টিকের মতো লম্বা করলেও পঞ্চাশ হাজার মানুষ নেই সেখানে। মঞ্চের সামনে কিছু মানুষ আর বাকি রাস্তা ধূ ধূ করছে। বিএনপির সমাবেশের কাছে তারা টিকটিকির সমান।
‘জনগণ এই আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু এই সত্য শেখ হাসিনা মেনে নেবেন না। গদি যে কত মধুর সেটি হাসিনার চেয়ে ভালো আর কে জানে!’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা বলছেন, জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশে ভোট হোক। এটি পারে কি পারে না সেটি ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু আমি জানি, কাল কিংবা পরশু আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলবেন, কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হয় সেটা শেখার জন্য জাতিসংঘকে বাংলাদেশে আসার আহবান জানাচ্ছি। পুরো মন্ত্রিসভার লোকগুলো বেহায়া, চোর। ভালো কথা বলার মতো কাউকে পাবেন না।’
মান্না বলেন, ‘শেখ হাসিনার দিন খারাপ। কাতুকুতু দিলেই এই সরকার পড়ে যাবে। বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে। এই শাসক থাকবে না। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। শেখ হাসিনার পতনের ঘণ্টা বাজিয়েই আমরা বাড়ি ফিরবো।’