বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর

  • প্রতিবেদক, রাজশাহী   
  • ২৭ জুলাই, ২০২৩ ২২:৪১

বৃহস্পতিবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের আগে দুই আসামিকে তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। রাত ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা ১ মিনিটে একই মঞ্চে একসঙ্গে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরা করা হয়েছে। তারা হলেন- সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল।

মঙ্গলবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ হয় আসামিদের। তারপর থেকেই যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল জানান, ফাঁসি কার্যকরের পর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ফাঁসি কার্যকর করার সময় ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক শামিম আহম্মেদ, রাজশাহীর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল, কারাগারের জেলার নিজামুল আজিম, রাজশাহী কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. মো. জুবায়ের আলম, ফার্মাসিস্ট উমর ফারুক ও ডেপুটি জেলার সাদ্দাত হোসেন।

এর আগে রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল। তিনি এ সময় তাদেরকে মামলার শুরু থেকে শেষ রায় পর্যন্ত পড়ে শোনান। এরপর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাওয়া হয়।

ফাঁসি কার্যকরের আগে দুই আসামিকে তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। এরপর রাত ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা ১ মিনিটে একই মঞ্চে একসঙ্গে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ময়না তদন্ত শেষে জাহাঙ্গীরের মরদেহ পাঠানো হবে নগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে।

এর আগে ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৩৫ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন তার পরিবারের ৫ সদস্য। এরপর তাদের পরিবারের আর কেউ দেখা করতে পারেননি।

ফাঁসির দণ্ড কার্যকরকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।

সাংবাদিকরা কারাগারের প্রধান ফটক পার হয়ে সামনের চত্বরে যেতে পারেননি। তাদেরকে প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনেক মানুষ এই ফটকের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন।

রাত ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের একটি পিকআপ ভেতরে ঢোকে। সোয়া ৯টার দিকে কারাগারের পেছনের দিকের গেট দিয়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসনের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে। আবার রাত ১১টার দিকে গাড়িগুলো কারাগার ত্যাগ করে।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২ মার্চ দুই আসামির ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে ৭ মে আবারও হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন স্বজনরা। মঙ্গলবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। ২ ফেব্রুয়ারি তার মরদেহ বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়।

তবে আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখে।

এদিকে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে বুকে ব্যথা উঠলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে ১৯ জুলাই রাজশাহী জেলা কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি ২৫ জুলাই রাতে কার্যকর করা হবে। এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান আসামিরা। তবে তা নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এ বিভাগের আরো খবর