জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে করা আবেদনের সঙ্গে যুক্ত হতে চান আরও ৪২ নাগরিক।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী।
তিনি বলেন, ‘জামায়তের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধের নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে একটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে। আমাদের ওই আবেদনের সঙ্গে দেশের আরও ৪২ নাগরিক পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন। শুনানির জন্য ৩১ জুলাই দিন ধার্য করা আছে।’
আবেদনকারী ওই ৪২ জন হলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাব উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আজহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক, শাহরিয়ার কবির, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমেদের ছেলে জাফর ইকবাল, মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বারক আলভী, মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মমতাজ জাহান, অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (মেজবাহ কামাল), বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন কাজী আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, রোকেয়া কবীর, শহীদ মোহন আদিত্যের ছেলে নটো কিশোর আদিত্য, শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ছেলে তানভীর শোভন হায়দার চৌধুরী, আবেদ খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মুজতবা আহমেদ মোর্শেদ, মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আলীম চৌধুরী, খুশী কবীর, নিসার হোসেন, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মোহাম্মদ রফিকুন নবী, আব্দুল মান্নান, মো. মনিরুজ্জামান, শেখ আফজাল হোসেন, ফরিদা জামান, বীরেন্দ্র কুমার সোম, আবুল হাশেম খান, এবিএম শামশুল হুদা, শামীম আক্তার, তানভীর মোকাম্মেল, হারুন হাবীব, ডা. সারওয়ার আলী ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন।
রুল জারির কারণে ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। ওই বেঞ্চ রুল শুনানি শেষ করে ২০১৩ সালের পয়লা আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন।
তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে।