নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক ও জেলা ছাত্রদল নেতা আশরাফুল হত্যার প্রধান আসামী ও সহযোগী সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতদের পরিবার।
বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে নিহত সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে জেলা বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত নেতা জাহেদুল কবির ভূইয়ার ফাঁসিসহ জড়িত অন্যান্য নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ২৫ মে নরসিংদী শহরের অস্থায়ী কার্যালয় ও খায়রুল কবির খোকনের বাসার সামনে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় খোকনের সন্ত্রাসী বাহিনীদের গুলিতে সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল গুলিবিদ্ধ হয়। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদেকুর রহমান সাদেক মারা যান এবং পরের দিন সকালে একই হাসপাতালে মারা যান আশরাফুল ইসলাম।
ঘাতকদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও এখন পযর্ন্ত বিচার যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় আলতাফ হোসেন বলেন, ‘নিহত দুই ছাত্রদল নেতা-কর্মীর মামলার ঘটনায় এই পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেসব আসামিরা আইনের ফাঁক ফোকরে জামিনে মুক্ত হয়ে নিহতদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নানা ভাবে হয়রানি এবং হুমকি দিচ্ছেন। যার জন্য নিহতদের পরিবার পরিজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘এই খায়রুল কবির খোকন ২০০৫ সালে ক্ষমতার বলে অবৈধভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করে এমপি হয়ে খুনের রাজত্ব কায়েম করে। এমনকি তার বিরুদ্ধে যারা সত্য কথা বলে এবং তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় পর্যায়ক্রমে তাদের দলের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে যারাই প্রতিবাদ করত তারাই হত্যার স্বীকার হতো।
‘তাই নরসিংদীর সর্বস্তরের জনগণ এই খুনি খায়রুল কবির খোকন ও তার সহযোগী কুখ্যাত সন্ত্রাসী, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ, জাহিদুল কবির জাহিদ, লাল ভাই ও আলমিনদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। কেননা এদের দিয়ে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ সকল প্রকার অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করা হয়। তাই আগামী নির্বাচনের আগে এই সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে নির্বাচনকালে আরও ব্যাপক আকারে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে অনেক মায়ের কোল শূন্য করে ফেলবে।’
প্রেক্ষাপট
গত ২৬ জানুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি, মাইনুদ্দিন ভূঁইয়াকে সিনিয়র সহসভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের (আংশিক) জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর থেকে ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পদ না পাওয়া সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা।
কমিটির ঘোষণার পর সেই রাতেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকনের বাসভবন ও জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটে।
পরে ১২ ফেব্রুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া ও সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাহিম রাজ অভি কে ছাত্রদল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।