কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনের আগের শাস্তি বাতিল করে নতুন করে যথাযথ সাজা দিয়ে ২৩ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া জড়িতদের কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে, তা জনতে চেয়েছে হাইকোর্ট। লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে বলা হয়।
আদালতে ইবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মন্জুরুল হক। রিটের পক্ষে ছিলেন গাজী মো. মোহসিন।
এর আগে ফুলপরী খাতুনের নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের খবর হাইকোর্টকে জানান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন, যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমি বলেছি, উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, উপাচার্য প্রথম শাস্তি হিসেবে ৫০০ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের জন্য বহিষ্কার করবেন। এরপর উপাচার্য যদি মনে করেন শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তাহলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু উপাচার্য নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লানারি কমিটিতে পাঠিয়ে কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘উপাচার্য ও কর্তৃপক্ষ দলীয় বিবেচনায় বহিষ্কার করেছেন। যাতে বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে বহিষ্কৃতরা আইনের আশ্রয় নিলে আদেশটা অকার্যকর হয়ে যায়। আদালত বলেছেন, এগুলো লিখিত আকারে দিতে।’
ফুলপরীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।
পরে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দায়ীদের শাস্তি দেয়া হয়।