চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় যৌনাঙ্গ কেটে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পিকে হত্যার ঘটনায় এক নারীসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
একই রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডের অর্থ অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেচার আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন রাশেদা বেগম ও হুমায়ুন রশীদ। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আকবর হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে সাদ্দাম, মো. পারভেজ ওরফে আলী ও আল আমিন।
এ মামলায় খালাস পেয়েছেন জাকির হোসেন ওরফে মোল্লা জাকির।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের আলীকদমের চৌমুহনী এলাকার ওমর ফারুক বাপ্পি আইন পেশায় যুক্ত হন ২০১৩ সালে। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে চকবাজার থানার কে বি আমান আলী সড়কের একটি ভবনের নিচ তলা থেকে বাপ্পির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তার হাত ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো, পা লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা ও যৌনাঙ্গ কাটা ছিল।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার দুই দিন পর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে উল্লেখ করা হয়, দেলোয়ার নামের এক ইয়াবা পাচারকারীর মামলা পরিচালনা করতেন বাপ্পি। মামলা পরিচালনার সুবাদে দেলোয়ারের স্ত্রী রাশেদা বেগমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় বাপ্পির। একপর্যায়ে তারা দুই লাখ টাকা দেনমোহরে গোপনে বিয়ে করেন।
ঘটনার দুই দিন আগেই স্বামী-স্ত্রী থাকবেন জানিয়ে কে বি আমান আলী সড়কের বাসা ভাড়া নেন রাশেদা। কাবিনে দেনমোহর অল্প হওয়ায় স্ত্রীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন বাপ্পি। তাই দেনমোহর বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা করেন রাশেদা। সে জন্য হুমায়ুন নামের এক বন্ধুর মাধ্যমে চার যুবককে ভাড়া করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর না দেয়ায় আসামিদের সহযোগিতায় বাপ্পিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাশেদা।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কেশব চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আইনজীবী হত্যার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর আসামিদের বিচার শুরু হয়। বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষে বুধবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।’