বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বাচনের আগে-পরের পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ নজর’ রাখবে ইইউ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৬ জুলাই, ২০২৩ ০৮:৫০

ইমন গিলমোর বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ইইউর একটি প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। তারা শিগগিরই রিপোর্ট দেবে, তবে নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইইউর।’

বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জোটটি।

ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর মঙ্গলবার দিনভর সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ অবস্থান তুলে ধরেন।

এসব বৈঠকে তিনি জানান, নির্বাচনের আগে ও পরের পরিস্থিতিতে বিশেষ নজর রাখবে ইইউ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে ইইউর উদ্বেগের কথাও জানান তিনি।

ছয় দিনের সফরে গত সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান আয়ারল্যান্ডের সাবেক এ উপপ্রধানমন্ত্রী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের দুই সপ্তাহের সফর শেষ হওয়ার পরই বাংলাদেশে আসেন ইইউর এ কর্মকর্তা।

গিলমোরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দিনভর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ইইউ প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর দূত চার্লস হোয়াইটলি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন।

এসব বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সুশাসন পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন গিলমোর।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে বৈঠক করেন ইমন গিলমোর।

বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ইইউর একটি প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। তারা শিগগিরই রিপোর্ট দেবে, তবে নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইইউর।’

বৈঠকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে গিলমোর বলেন, ‘বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক অনেক ভালো। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী।

‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আমরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি। তারা (জাতীয় মানবাধিকার কমিশন) সরকারি পর্যায়ে কথা বলবে।’

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স খুব বেশি দিনের নয় এবং এর ‘সীমাবদ্ধতা’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতৃত্ব ভালো করে জানেন ও বোঝেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউর বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনের আগে ও পরে মানবাধিকারসহ সব ধরনের পরিস্থিতি নজরে রাখবে ইইউ। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানবাধিকার। আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে, সামনে নির্বাচন হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই আমরা।

‘সম্প্রতি ইইউ এক্সপ্লোরেটরি মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে এবং তারা হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেলের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স খুব বেশি দিনের নয় এবং এর ‘সীমাবদ্ধতা’ ইইউ নেতৃত্ব ভালো করে জানেন ও বোঝেন।”

বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তাদের বিষয়।

‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে যে বলিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেটির ওপর নির্ভর করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’

পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইমন গিলমোর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে, তবে এই আইনটি সংশোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে আইনমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।

‘আমরা এর অপেক্ষায় আছি। প্রকাশ হওয়ার পর আমরা আইনটি বিস্তারিতভাবে পরখ করে দেখব।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের খসড়া জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। আর যে সংশোধন হচ্ছে, তাতে সাংবাদিকরাও খুশি হবেন।

আইনে কী সংশোধন হচ্ছে, তা উল্লেখ করেননি মন্ত্রী। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এটার (সংশোধনী) জন্য আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। আপনাদের উদ্বেগ সরকারের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

‘আমি এটুকু বলতে পারি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে সংশোধন হচ্ছে, তাতে আপনারা সবাই খুশি হবেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা অনেক কমে গেছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে জানানো হয়েছে। সচিবালয়ে গিলমোরের সঙ্গে এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা বেশি এসেছে। তাদের নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।

‘আমরা জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন সবকিছুতে উন্নত হয়েছে, অভূতপূর্ব সফলতা এনেছে, তার সঙ্গে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে। এখানে মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তারা স্বাধীন। তারাও কাজ করছে।’

গুম, খুন ও বিরোধী দল যে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ করেছে, তা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে বিশেষ কোনো কথা হয়নি। তারা বলেছে, তারা পর্যবেক্ষণ করছে।

‘গুম, খুনের একটি চিত্র তার সামনে তুলে ধরেছি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা অনুসারে, ২০০৪ সালে ৪০০ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। তখন যে নিখোঁজগুলো হয়েছে, তার তুলনায় এখন অনেক কম।’

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধি দলটি।

বৈঠকে গিলমোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দেশের শ্রম আইন সংশোধনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের বিষয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার।

ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে চার বছরের মধ্যে এটি ইমন গিলমোরের দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। তিনি ২০১৯ সালের জুনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর