বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পল্লবীতে মাকে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ, ‘প্রতিবাদে আত্মহত্যা’ মেয়ের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৫ জুলাই, ২০২৩ ১৩:১৪

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার জসীমউদ্দীন মোল্লা মধ্যরাতে পল্লবী থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘পল্লবী থানার একটি দল এক মাদক কারবারি লাভলীকে ধরতে যায়। তার ওখান থেকে কিছু গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার হয়। এরপর তাকে ছাড়িয়ে রাখার জন্য তার মেয়ে ও পরিবারের লোকজন টানাহেঁচড়া করে। একটা পর্যায়ে লাভলীকে নিয়ে পুলিশ নিচে নেমে আসে। ওই সময়ে তার মেয়ে দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে পুলিশকে। একই সময় সে দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার অ্যাক্টিং করতে গিয়ে সে ভেতরে মারা গেছে। পরে পাবলিকে দরজা ভেঙে তাকে বের করেছে। সেই ভিডিও আছে।’

রাজধানীর পল্লবীতে একটি বাড়িতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনার পর তার মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মাকে নির্যাতনের প্রতিবাদে মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, এই অভিযোগ কোনোভাবেই ঠিক নয়।

সোমবার রাত আটটার দিকে পল্লবী থানাধীন কালশি আদর্শ নগর ১১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর নাম বৈশাখী আর তার মায়ের নাম লাভলী। লাভলীর চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বৈশাখী সেজো।

বৈশাখী স্বামীর সঙ্গে মিরপুরেরর বাউনিয়া এলাকায় থাকতেন। সোমবার বিকেলে মায়ের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি।

পল্লবী থানার পুলিশের সামনেই ওই কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। পরে পুলিশ সদস্যদের আটকে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তারা।

এলাকাবাসীর দাবি, ২১ নম্বর চারতলা বাড়িটির মালিক লাভলী। তার নামে দুটি মাদকের মামলা আছে। মাঝে-মধ্যেই পল্লবী থানার পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে টাকা দাবি করে। গত রোববারও এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে পুলিশ। সোমবার লাভলীর বাসায় পুলিশ গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তাকে নির্যাতন করে। এর প্রতিবাদে বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে।

বৈশাখীর মামা সুজন বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আমার বোন লাভলীর বাসায় গিয়ে তার কাছে কোনো মাদক না পেলেও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখায় পুলিশ। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। লাভলী ৫০ হাজার টাকা দিলেও তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে পল্লবী থানার এসআই জহির, ওহিদ, আনোয়ারসহ পুলিশের স্থানীয় সোর্সরা। এ দৃশ্য দেখে আমার ভাগ্নি কষ্টে পুলিশের সামনেই আত্মহত্যা করেছে।’

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার জসীমউদ্দীন মোল্লা মধ্যরাতে পল্লবী থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘পল্লবী থানার একটি দল এক মাদক কারবারি লাভলীকে ধরতে যায়। তার ওখান থেকে কিছু গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার হয়। এরপর তাকে ছাড়িয়ে রাখার জন্য তার মেয়ে ও পরিবারের লোকজন টানাহেঁচড়া করে। একটা পর্যায়ে লাভলীকে নিয়ে পুলিশ নিচে নেমে আসে।

‘ওই সময়ে তার মেয়ে দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে পুলিশকে। একই সময় দরজা আটকিয়ে আত্মহত্যার অ্যাক্টিং করতে গিয়ে সে ভেতরে মারা গেছে। পরে পাবলিক দরজা ভেঙে তাকে বের করেছে। সেই ভিডিও আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাভলীর নামে সাতটি এবং বৈশাখীর নামে চারটি মাদকের মামলা আছে। এরা পুরো পরিবারটিই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ‘আর লাভলী কী রকম অ্যাক্টিং করতে পারে, তা সবাই দেখেছে। সে আমাদের সঙ্গে রওনা করল। পথে এসে সে অজ্ঞান হওয়ার ভান করল। তার লোকজন তখন তাকে পুলিশের গাড়িতে আনতে দেবে না, তাকে যখন অটোরিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেখান থেকে সে ভেগে গেল।’

পুরো ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

বৈশাখীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরাও শুনেছি যে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এবং সেখানে এসআই জহিরের দায় আছে। জহিরকে কিন্তু নিচে আটকে রাখা হয়। সেখানে একটা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, পুলিশ মাদক উদ্ধার করতে এসে একটা মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে।

‘আমরা গিয়ে দেখলাম, যেই রুমটা থেকে লাভলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই রুমেই বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে। পাবলিক ওই গেট ভেঙে বৈশাখীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাকে নিয়ে গেলে বৈশাখী আত্মহত্যা করবে বলে যে হুমকি দিচ্ছিল, ওখানকার কিছু মানুষ কিন্তু এরকম ভিডিও ধারণ করেছেন, আমাদের দেখিয়েছেনও।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিচে লাভলীকে আনা হলে আমাদের এক নারী পুলিশসহ চারজনকে আটকে রাখা হয়। আর মেয়েটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ বেরিয়ে এসে পুলিশকে ঘিরে ফেলে। তারা পুলিশের ওপর ইট ছুড়েছে। আমাদের লোক আহতও হয়েছে। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে শান্ত করি। এমনকি বৈশাখীর মরদেহ উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে আনার সময় কিছু মানুষ মরদেহ নামিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে।’

থানার ছত্রছায়ায় মাদক কারবারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও এরকম অনেক কথা শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত হবে। কেউ যদি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্তব্য পালনে কোনো ত্রুটি থাকলেও অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

লাভলীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে এডিসি নাজমুল বলেন, ‘একজন নারীকে পুলিশ কেন বিবস্ত্র করতে যাবে? প্রত্যেকটা ঘটনারই ফুটেজ আছে স্থানীয়দের কাছে। প্রচুর গুজব ছড়ানো হয়েছে। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর