বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছড়িয়ে পড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ, আতঙ্কে খামারিরা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৫ জুলাই, ২০২৩ ১১:০২

নওগাঁ জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, ‘মশা-মাছি ও ডাশজাতীয় রক্ত খায়, এমন পতঙ্গের মাধ্যমে এক গরু থেকে আরেক গরুতে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে খামারি ও কৃষকদের গরুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা এবং মশা, মাছি ও ডাশের কামড় থেকে বাঁচাতে মশারি ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে এই রোগ শতভাগ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত মাসখানেকের মধ্যে রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম ও নওগাঁয় বেশকিছু গরু মারাও গেছে। খামারিরা এ রোগের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

খামারিরা জানান, যেভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাচ্ছে, তাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কাছে গরুর মৃত্যুর তথ্য-পরিসংখ্যানও মিলছে না। তবে এই রোগ নিয়ে খামারিদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

তারা জানান, লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এই রোগে গরুর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

রাজবাড়ীর খামারিরা জানান, এ রোগে আক্রান্ত হলে গরু কিছু খেতে চায় না। কয়েক দিন পর গোটা ফেটে ঘা হয়ে যায়। গরু হাঁটতেও পারে না। বিশেষ করে গরুর বাছুরের মধ্যে এই রোগে মৃত্যুর হার বেশি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের প্রান্তিক খামারি আক্কাস বেপারি বলেন, ‘আমার খামারের চারটি গাভি লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে দুটি গাভি সুস্থ হলেও বাকি দুটি এখনো সুস্থ হয়নি। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই আমার গাভির দুধ দেয়া কমে গেছে।’

রাজবাড়ী পৌর শহরের বেড়াডাঙ্গা এলাকার খামারি মোর্শেদ আলম মালেক বলেন, ‘আমার একটিমাত্র গরু ছিল, যা লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার মারা গেছে। বর্তমানে যেসব গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সেগুলোকে পশু হাসপাতালের ডাক্তাররা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিলে গরুগুলো মারা যেত না।’

সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে মশা, মাছি ও নোংরা পরিবেশ থেকে গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। এ জন্য গরুর ঘর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং গোয়ালঘরে মশারি ব্যবহার করতে হবে।’

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের আক্কাস বেপারীর খামারের গরু। ছবি: নিউজবাংলা

নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় গত সাত দিনে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৩০টি গরুর মৃত্যুর তথ্য মিলেছে।

জেলার পশু চিকিৎসকরা জানান, বড় গরু লাম্পি স্কিন রোগে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকলেও বাছুরের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৭ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিনে নওগাঁ সদর, রানীনগর, মান্দা, বদলগাছী, পোরশা, পত্নীতলা, আত্রাই, নিয়ামতপুর ও মহাদেবপুর উপজেলায় ৩০টি গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে জেলার ১১টি উপজেলার পশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৫২৫টি গরু।

পোরশার নিস্কিনপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত আমার চার মাস বয়সী একটি বাছুর ও প্রতিবেশী সাইফুদ্দিনের একটি বড় গরু মারা গেছে। আমার আরও তিনটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। নিস্কিনপুরেই গত এক মাসে ৬০ থেকে ৭০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। পাশের গ্রাম মোল্লাপাড়ায়ও অনেক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।’

বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্যারাসিটামল ও সর্দি থাকলে হিস্টাসিন-জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। বসন্তের (পক্স) একটি ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়াচ্ছে। এই রোগ প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠক করাসহ ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটরদের মাধ্যমে খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, ‘মশা-মাছি ও ডাশজাতীয় রক্ত খায়, এমন পতঙ্গের মাধ্যমে এক গরু থেকে আরেক গরুতে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে খামারি ও কৃষকদের গরুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা এবং মশা, মাছি ও ডাশের কামড় থেকে বাঁচাতে মশারি ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে এই রোগ শতভাগ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

কুড়িগ্রামেও লাম্পি স্কিনের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ব্যাপক আকারে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত বা মৃত গরুর তথ্য-পরিসংখ্যান দিতে পারেনি।

জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী রওশন আরা বেগমের সাতটি গরু ছিল। কিছু দিন আগে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয় চারটি গরু। এর মধ্যে একটি মারা গেছে। সংসারের সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য সন্তানের মতো লালন-পালন করা এসব গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ডাংরার বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বাড়িতেই সাতটি বিদেশি গরুর খামার গড়েছেন। তাই দিয়ে সংসার চলে তার। লাম্পি স্কিন রোগে সপ্তাহ দুয়েক আগে তার ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু মারা গেছে। আক্রান্ত আছে আরেকটি গরু।

গরু লালন-পালনকারী অন্য পরিবারগুলোর অবস্থাও একই। কারও একটি, কারও একাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরু পালনকে জীবিকা হিসেবে যারা বেছে নিয়েছেন, জেলার সেসব ব্যক্তি এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের পারা মৌলায় গ্রামের বাসিন্দা নুরনাহার বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের ফকরুল, সমশের চাচা, শাহিনা চাচি, বাবু, শরিফুল, বিপ্লব ভাই ও সমির দাদার একটি করে গরু মারা গেছে। সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার ক্ষতির পাশাপাশি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকের গরু মারা যাচ্ছে। এতে দরিদ্র এই পরিবারগুলো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এপ্রিল মাস থেকে জেলায় লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী থেকে ২৩টি নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ লাইভ স্টক রির্সাচ ইনস্টিটিউশনে পাঠানো হয়েছে। যেসব গরু আমাদের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসে, সেগুলোর হিসাব আমরা দিতে পারি। কিন্তু বাইরেরগুলো আমাদের নজরদারিতে থাকে না বলে সেই তথ্য আমাদের জানা থাকে না।’

এ বিভাগের আরো খবর