দফায় দফায় জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও নরসিংদীর স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলের জমি দখলের এ উৎসবে মেতেছেন সদর উপজেলার মাধবদী, পলাশ ও রায়পুরার প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনের ঘুরে দেখা গেছে, নরসিংদী সদর থেকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে চলাচলের সাবেক রেল সড়ক অংশে স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য জমি নিয়ে চলছে কারবার।
সাবেক এ রেল সড়কটির রেল চলাচলের অংশে জনসাধরণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতায় সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে যান চলাচলের সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় সড়কের দুই পাশে বাড়ছে স্থাপনা।
সদর উপজেলার মাধবদীর আব্দুল্লাহ বাজার, খরমর্দী, কোতালীর চর, বিলপাড় শান্তির বাজার, খড়িয়া বাজারে রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিগুলো মনগড়া চুক্তি করে বদলানো হচ্ছে মালিকানা। জমিগুলোতে স্থায়ী পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে আগাম দখলে নেয়ার উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
রেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই নাকি এসব জমি দখল করা হচ্ছে। আবার লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে বলেও বড় গলায় দাবি করছেন অনেকে।
ইতোমধ্যে অনেক স্থায়ী স্থাপনা দৃশ্যমান হয়েছে সাবেক এই রেল লাইনের পাশে। এর মধ্যে মাধবদীর আব্দুল্লাহ বাজার, চৌদ্দপাইকা, খরমর্দী থেকে শান্তির বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সওজের সড়কের পাশে রেলের জমিতে আধাপাকা ঘর নির্মাণের নামে কৌশলে রড ও সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে পাকা করে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। মাধবদীর খরমর্দী এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের দক্ষিণ পাশে রেলের ডোবা জমিতে বালু ফেলে জমি দখল করা হয়েছে। তবে এ জমির মালিক কে- বলতে পারেননি স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের জমিতে গড়ে ওঠা মার্কেটের এক ভাড়াটিয়া জানান, তিনি দুই শাটার-সম্বলিত একটি দোকান বছরে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়েছেন। তবে চার বছর অতিবাহিত হলেও এখনও ঘর মালিকের মুখ দেখেননি বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘ভাড়ার চুক্তিতে লেখা আছে, যে কোন সময় রেলের জমিতে নির্মাণ করা আধাপাকা দোকানগুলো ভাঙ্গা পড়তে। তাই সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমার।’
ঘর নির্মাণের জন্য এনে রাখা হয়েছে ইট-বালু। ছবি: নিউজবাংলা
রেলের জমি ভোগদখলে থাকা সূত্রে নিজেকে মালিক দাবি করা আবু তাহের জানান, সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছেন তিনি। এখানে অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া এই রেল সড়কের পাশে সরকারি জমিগুলো ক্রয় সূত্রেও মালিক দাবি করেন একাধিক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে নরসিংদী রেল কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ভূমি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য জেলায় নেই।’ ঢাকায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি।
নরসিংদীর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘নরসিংদী টু মদনগঞ্জ সড়কটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। সাবেক এই রেল সড়কটি সওজ কর্তৃপক্ষ পাকা করে দিলে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পায়। তবে সড়ক আইনে যে কোনো সড়কের পাশে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ।’
রেলের জমিতে চলছে মার্কেট নির্মাণ। ছবি: নিউজবাংলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মচারী বলেন, ‘রেলের জমিগুলো মূলত জোর করে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। রেলের জমিতে কেউ লিজ নিলেও স্থায়ী পাকা ভবন করতে পারবেন না। অস্থায়ী স্থাপনা করতে পারবেন। যেমন কৃষি জমিকে চাষ করতে পারবে, নালা-ডোবায় মৎস চাষ করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি বসবাস ও বাণিজ্যিক কাজ করার জন্য স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না।’
তবে লিজ দেয়া জমি থেকে রেল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তাকে সরিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান এ কর্মচারী।
এদিকে নরসিংদীতে দফায় দফায় রেলওয়ের জমি বেদখলমুক্ত ও স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা পরও বন্ধ হয়নি রেলওয়ের জমি দখল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।