ঢাকার সাভারের ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ ও ইউনিকসহ আশপাশের এলাকায় মারাত্মক রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এ ইউনিয়নে।
গত মাসে শতাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পর চলতি মাসে এ সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগেই এলাকায় মশা নিধনে নানা কার্যক্রম শুরু করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে রোববার গিয়ে ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া যায়। এর বেশির ভাগই ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ ও ইউনিকসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দা।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ম্যানেজার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের হাসপাতালে ৫৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৯ জন। বর্তমানে ৪৬ জন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি রয়েছেন।
‘এদের মধ্যে নারী ১৭, পুরুষ ১৩ ও শিশু ১৩ জন। জুন মাসে আমাদের হাসপাতালে ১১৬ জন ডেঙ্গু পজিটিভ পেয়েছি। চলতি মাসে এ সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এ হাসপাতালে ডেঙ্গু পজিটিভ রোগীরা অধিকাংশই জামগড়া, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দা।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এ এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশ। লাখ লাখ মানুষের বসবাস এখানে। বিশেষ করে জামগড়া ও আশপাশের এলাকায় অনেকে বসবাস করেন।
‘পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। এ এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। সেখান থেকেই এডিসের বংশ বিস্তারের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
নাছিমা পারভিন নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘পুরো জামগড়া এলাকার যত্রতত্র পানি জমে আছে। ইতোমধ্যে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি।
‘আমাদের বাসার পাশের এক ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি। স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখি রোগী ভর্তি। বাচ্চাদের নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।’
আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। আমরা চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি রোগী ও তাদের স্বজনদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। বাসাবাড়ির আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, এসব বিষয় তাদের বোঝানো হচ্ছে।’
এদিকে এলাকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মশা নিধনে কার্যক্রম শুরু করেছেন চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ সুমন ভূঁইয়া। ফগার মেশিনের সাহায্যে গত দুই দিন ধরে তিনি পাড়া-মহল্লায় স্প্রে করার ব্যবস্থা করেছেন।
ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ সুমন ভূঁইয়া বলেন, ‘গত কয়েক দিন যাবত আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় উদ্বেগজনকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মশা নিধনে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। বেশ কিছু ফগার মেশিন ও কেমিক্যাল সংগ্রহ করে কার্যক্রম শুরু করেছি। এ জন্য একটি টিম গঠন করছি, যারা প্রত্যেক দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যেখানে জমে থাকা পানি ও আর্বজনায় ভরা স্থান রয়েছে, সেখানে স্প্রে করবে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু নির্মূলে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাশাপাশি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদেরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করছি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ডেঙ্গু নির্মূল করা সম্ভব হবে।’
কোনো সরকারি বরাদ্দ আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে চেয়ারম্যান হিসেবে তো দায়িত্ব আমার কাঁধেই বর্তায়। বরাদ্দ বড় কথা না।
‘উদ্যোগ নিলে, সচেষ্ট ও আন্তরিকতা থাকলে সব কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব। তাই সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যক্তিগতভাবেই আমি এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’