জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে লালবাগের ব্যবসায়ী এখলাসকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়।
মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনির এ অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি ২০ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন। ১১ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। এ কাজে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে তিনি জঙ্গিদের মতো ব্যবহার করেছেন ‘কাটআউট’ পদ্ধতি।
গ্রেপ্তার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জানানো হয়, ঈদুল আজহার আগের রাতকে হত্যার জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ওই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে এখলাস আর ফেরেননি।
নিখোঁজের দুই দিন পর কামরাঙ্গীরচর থেকে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড থেকে আকাশ পথে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ অভিযুক্ত ঝন্টু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
তিনি মনিরের ক্যাশিয়ার। তিনি চার দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
তার দেয়া তথ্যে এলিফ্যান্ট রোড ও কেরাণীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুর রহমান ওরফে রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী মো. এসহাককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় ডিবির অপর দুটি দল মাগুরা ও যশোরের বেনাপোল বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সাল এবং মনিরকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের সময় মনিরের কাছে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল ফোন, ২২ হাজার টাকা, পাঁচ হাজার রুপি জব্দ করা হয়।
কেন এ হত্যা
ডিবি প্রধান হারুন জানান, হাজারীবাগ ও সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমি দস্যূ এবং দালাল।
বিভিন্ন সময়ে তিনি এখলাছকে দিয়ে জমি দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করান।
কামরাঙ্গীরচর সিএস ২২ দাগের জমিতে এখলাছের ৪০ শতক রয়েছে। এর মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
কোম্পানি মনির জমিটি নিজের দখলে নিয়ে অধিগ্রহণ মূল্য আত্মসাতের চেষ্টা করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এখলাছ একাধিক মামলা করেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও দেন তিনি।
এখলাছকে দমাতে বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মনির হত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি করে ডিবি।
কে এ মনির
ডিবি জানায়, নোয়াখালীর দিনমজুর আবদুর রহিমের ছেলে মনির হোসেন। আবদুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করতেন। ১৯৮০/৮২ সালে বাবার সঙ্গে মনির হোসেন ট্যানারি কারখানায় চামড়ার ময়লা পরিষ্কারের কাজ নেন।
পরে ‘সন্ত্রাসী’ ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেই চামড়া কেনাবেচা শুরু করেন মনির।
এর সঙ্গে জমি দখল, দালালি ও ব্যবসাতেও যোগ দেন। বর্তমানে তিনি চার-পাঁচটি ট্যানারি এবং কয়েক কোটি টাকার মালিক বলে জানা গেছে।
ডিবি আরও জানায়, ২০০২ সালে সিকদার পেট্রল পাম্পের সামনে গুলি করে রুহুল আমিন নামের একজনকে হত্যা করা হয়।
ওই মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন এ মনির। ২০১৫ সালে ইফতারির আগে জসিম ওরফে গুন্ডা জসিম নামের একজনকে হাজারীবাগ বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতেও তিনি অভিযুক্ত হন।
টাকা এবং প্রভাবশালীদের তদবিরে মনির সেসব মামলায় জামিন পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে জানায় ডিবি।