কিশোরগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে বিষক্রিয়ায় স্ত্রীকে হত্যার মামলায় এক কারারক্ষীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৮ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নিহত রুমা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী গ্রামের দুবাই প্রবাসী আবদুল মান্নানের মেয়ে।
কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এম এ আফজল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের মে মাসে কারারক্ষী খাইরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় রুমা আক্তারের। বিয়ের পর থেকে খাইরুল ও রুমা কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের ফ্যামিলি কোয়াটারে থাকতেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় খাইরুল রুমাকে চাপ দিতে শুরু করেন।
রুমা বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে মেয়ের সংসারে শান্তির কথা চিন্তা করে মা ছিনু বেগম খাইরুলকে তিন লাখ টাকা দেন। এ টাকা দেয়ার ছয় মাস পর থেকে মোটরসাইকেল কেনার জন্য আবারও রুমার কাছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন খাইরুল। এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে রুমার ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করেন তার স্বামী।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে রুমাকে কিল-ঘুষি মেরে জখম করেন খাইরুল। এক পর্যায়ে কৌশলে বিষ পান করানো হয় তাকে। পরদিন সকালে খবর পেয়ে রুমা আক্তারের মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসে রুমাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। খানিকটা সুস্থ হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২৬ ডিসেম্বর তাকে ছাড়পত্র দেন। পরে ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন রুমা। মুমূর্ষু অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বিকেলে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে রুমা আক্তারের মা ছিনু বেগম বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন আদালতে আসামি খাইরুল ইসলামের নামে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা করে পুলিশ। মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন।